ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

প্রানমন্ত্রীর আশ্বাস পেলেও খুশি নন হেফাজত নেতারা

২০২২ ডিসেম্বর ১৯ ১২:৫৩:০৮
প্রানমন্ত্রীর আশ্বাস পেলেও খুশি নন হেফাজত নেতারা

এসময় বৈঠকে ছিলেন সংগঠনের মহাসচিবসহ ১১ নেতা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছিলেন না হেফাজতের আমির মাওলানা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। গত ২১ মাসে চারবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে হেফাজতের।

হেফাজত সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার ঢাকার গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে ‘জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন’ করে হেফাজতে ইসলাম। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর কর্মসূচিতে ফিরল সংগঠনটি। তাদের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা থাকেন ঢাকার বাইরে। তারা শনিবারের সম্মেলনে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীতে যান। তাই ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও সাক্ষাতের উদ্যোগ নেওয়া হয় অনেক আগেই। সম্মেলনে কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারসহ যে সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে, সেগুলোই প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব, শিক্ষা কমিশনে আলেমদের অন্তর্ভুক্ত ও কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদকে আসতে না দেওয়ার দাবিও জানানো হয়।

বৈঠকে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।’ এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগে আশ্বাস কার্যকর-বাস্তবায়ন হোক। এর পরই খুশি হওয়া।’

বৈঠকে ‘রাজনীতি ও নির্বাচন’ নিয়ে একটি শব্দও আলোচনা হয়নি দাবি করে সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা কিফায়াতুল্লাহ আজহারী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।’ মাওলানা মামুনুল হক প্রসঙ্গে কিফায়াতুল্লাহ বলেন, ‘তিনি বা কোনো নির্দিষ্ট নেতা নন, আটক আমাদের সব নেতার মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।’

বৈঠকে তারা বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই সঙ্গে নিয়ে যান জানিয়ে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে হেফাজত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও তাদের নামে সব মামলা প্রত্যাহারসহ শিক্ষা কমিশনে আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ে আপত্তির অংশটুকু প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়।’

হেফাজত প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস শিগগিরই বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে জানিয়ে মুহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। বৈঠকে বিষয়টি আমরা বেশ অনুধাবন করেছি।’

আগাম আশ্বাস পেয়েই শনিবারের সম্মেলন থেকে কোনো ‘গরম’ কর্মসূচি দেওয়া হয়নি বলে রাজনীতি-সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাওলানা রব্বানী বলেন, ‘আমরা আলেম মানুষ। শান্তিপ্রিয় মানুষ। শুধু শুধু গরম কর্মসূচি কেন দেব আমরা?’

এদিকে মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে সরে গেছে বর্তমান হেফাজত—এমন মন্তব্য করে সংগঠনের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শফিপন্থি হিসেবে পরিচিত মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্বের বক্তৃতা-স্লোগানে আমরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টির গন্ধ পাচ্ছি।’

মরহুম শফির সঙ্গে সরকার ও আওয়ামী লীগের কোনো মন্ত্রী, এমপি ও প্রতিনিধি দেখা করতে গেলে বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক হলেই বর্তমান হেফাজতের অনেকে মাওলানা শফিকে ‘সরকারের দালাল’ তকমা দিতেন বলে জানিয়েছেন মঈনুদ্দিন রুহী। ‘সেই দালাল এখন হালাল’ হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব সরকারের গোলামি করছে। এরা আওয়ামী লীগের গোলাম হয়ে গেছে।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, ‘সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী সংগঠন হেফাজতের সঙ্গে সরকারপ্রধানের বৈঠক মোটেও কাম্য নয়। সাধারণ জনগণ বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না।’ যারা শাপলা চত্বর সৃষ্টি করে তাণ্ডবের রাজত্ব কায়েম করেছিল; তাদের সঙ্গেই সরকারের রাজনৈতিক বোঝাপড়া দেশে শান্তি আনবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটি আগামীদিনের জন্য ভীষণ অশনিসংকেত। এতে সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি তথা জঙ্গিবাদ উৎসাহিত হবে।’

মোর্শেদ/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর