ঢাকা, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগ

২০২৪ অক্টোবর ১০ ২২:০৬:২৪
ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগ

শেখ হাসিনার শাসনামলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাত ধ্বংসের মুখে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যাংকিং খাতকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ডুবন্ত ব্যাংকিং খাতে ধীরে ধীরে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

তাদের মতে, টাস্কফোর্স গঠন, অন্তত এক ডজন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন, দখলদারদের হাত থেকে ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার এবং কাগজের নোট ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট না কমানোর সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ফল দেবে।

দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদকে অর্থ উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। আর ড. আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তারা দুজনই আন্তরিক। এরই মধ্যে তারা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরে আসবে এবং সুশাসন ফিরলে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা কমবে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আস্থা ফিরে পাবে।

এদিকে এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ৭টি ব্যাংককে 'উদ্ধার' করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সাতটি ব্যাংকসহ ১২টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোস্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউসিবি, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

এর বাইরে আরও কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। এসব ব্যাংক আসলে পরিচালনা পর্ষদ তাদের নিজস্ব আত্মীয়দের দ্বারা পরিচালিত হয়। এস আলম ছয়টি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ৯৫ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এর পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৫৪টি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে বিগত সরকারের আমলে ৩৮টি ব্যাংককে ‘দুর্বল ব্যাংক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও ওইসব দুর্বল ব্যাংককে শক্তিশালী করতে কাজ করছে।

দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা না তুলে শক্তিশালী ব্যাংকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। আহসান এইচ মনসুর বলেন, তাহলে ওই ব্যাংকগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। তিনি গ্রাহকদের আমানতের নিশ্চয়তাও দেন।

আর শক্তিশালী ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে দুর্বল ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য জমা দিতে। দুর্বল ব্যাংকগুলো তাদের তারল্যের একটি অংশ পেলে তারাও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. নুরুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, "তিনটি টাস্কফোর্সের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করা, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করা এবং খেলাপি ঋণ মোকাবিলা করা এবং আরেকটি হলো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠন। ফলে শুরুটা বেশ ভালোভাবেই দেখছি। আমরা আশা করছি এর মাধ্যমে ভালো হবে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরে আসবে।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে শ্বেতপত্রও প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। টাস্কফোর্স আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, খারাপ সম্পদ, ব্যাংকিং খাতের বড় ঝুঁকিগুলি মূল্যায়ন করবে।

এ ছাড়া দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা মূল্যায়ন, নিরাপত্তা আমানতের ঘাটতি মূল্যায়ন, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নিট মূলধনের মূল্যায়ন, সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর