ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

১১ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা

২০২২ ডিসেম্বর ১৫ ১১:০৯:০৩
১১ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ১১টি ব্যাংক ৩২ হাজার ৬০৬ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের, দুটি বিশেষায়িত খাতের এবং চারটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘাটতিতে পড়েছে বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত হিসাবে দেশের সরকারি-বেসরকারি ১২টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ছিল। ওই সময় ব্যাংকগুলোর ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৩১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকের সংখ্যা একটি কমলেও মূলধন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। জুনে মূলধন সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি, বেসরকারি পাঁচটি ও বিশেষায়িত খাতের দুটি ব্যাংক ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও যোগসাজশের মাধ্যমে বের করা ঋণ যথাসময়ে ফেরত আসছে না। ফলে নির্দিষ্ট সময় পর এসব ঋণের বড় অংশই খেলাপি হয়ে পড়ছে। এর বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। বাড়তি অর্থ জোগাতে হাত দিতে হচ্ছে মূলধনে। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিয়ে বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ বিতরণ করায় সেসব ঋণ আর ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। খেলাপির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে ব্যাংকগুলো। সরকারি ব্যাংকগুলোতে এ হার বেশি। এর মূল কারণ এসব ব্যাংকে সুশাসনের অভাব রয়েছে। তাদের কোনো জবাবদিহি নেই।

তিনি আরো বলেন, ঘাটতি কমাতে হলে ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে হবে। একই সঙ্গে নতুন ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে দিতে হবে, যাতে নতুন করে আর খেলাপি ঋণ না বাড়ে। তাহলেই অবস্থা উন্নতি হবে।

আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হয়। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জোগান দেওয়া অর্থ ও মুনাফার একটি অংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।

হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে, সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ২ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকা। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে ১৫ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে ১৩ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বেসরকারি চারটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৫ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা ও পদ্মা ব্যাংকের ৪২৫ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

মোর্শেদ/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর