ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

একমি পেস্টিসাইডসে অনিয়ম করেও শাস্তির বাইরে শাহজালাল ইক্যুইটি

২০২৩ নভেম্বর ১৯ ১৮:৩৯:৪৯
একমি পেস্টিসাইডসে অনিয়ম করেও শাস্তির বাইরে শাহজালাল ইক্যুইটি

একই রমক অনিয়ম শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রেও হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির ইস্যু ম্যানেজ করা একমি পেস্টিসাইডসেও তেমনটি হয়েছে। এক্ষেত্রেও কমিশনের ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা।

বানকো ফাইন্যান্স লাভেলো আইসক্রিম, সী পার্ল, বিবিএস কেবলস ও নাহি অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে। এরমধ্যে বিবিএস কেবলস ও নাহি অ্যালুমিনিয়াম ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের পূর্বে এসেছে। বাকি দুটি এসেছে সংশোধনের পরে।

কোম্পানিগুলোতে বানকো ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কোন শেয়ার ধারণ না করেও ১০ কোটি টাকার আর্থিক ও ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞার শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। এছাড়া তার আত্মীয়-স্বজন ওইসব কোম্পানির প্লেসমেন্ট কেনার দায়ে তাদের ১৬ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কিন্তু একমি পেস্টিসাইডসে একই ধরনের অনিয়ম করেছে শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট। এই প্রতিষ্ঠানটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে মাহফুজা ইউনুস ও প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস (সর্ম্পক্যে স্বামী-স্ত্রী) জড়িত থাকার পরেও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি একমি পেস্টিসাইডসের আইপিওকালীন শেয়ার ধারণ করেছে। তবে তারা এখনো শাস্তির আওতায় আসেনি।

বানকো’র ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করা কোম্পানিগুলোতে সাবেক এমডির আত্মীয়-স্বজন প্লেসমেন্ট শেয়ার ধারণ করায় ২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি) লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি বিএসইসির। এই কারণে সাবেক এমডি ও তার পরিবারকে জরিমানা করা হয়েছে।

কিন্তু বিএসইসির পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের আগে কোনো ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানের এমডির আত্মীয়-স্বজন শেয়ার ব্যবসা করতে পারবেন না, এমনটি নেই।

২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি)-তে বলা হয়, ইস্যু ম্যানেজার ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না এবং শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। যা ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই সংশোধনীতে বলা হয়, ইস্যু ম্যানেজার ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না এবং শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না।

রুলসটি সংশোধনের আগে বিবিএস কেবলস ও নাহি অ্যালুমিনিয়াম শেয়ারবাজারে আসার পরেও বানকোর সাবেক এমডি ও তার পরিবারকে দায়ী করা হয়েছে। যে হিসেবে একমি পেস্টিসাইডসে আরও বড় অনিয়ম হয়েছে।

তথ্যে দেখা যায়, একমি পেস্টিসাইডসে শাহজালাল ইক্যুইটির চেয়ারম্যান মাহফুজা ইউনুস ও তার স্বামী এবং প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের পরিচালিত এবং তাদের মালিকানাধীন কোম্পানির ২৮ লাখ শেয়ার ধারণ ছিল। যা অভিহিত মূল্যে দর দাঁড়ায় ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যেগুলো গত ১৪ নভেম্বর লক ফ্রি বা বিক্রিযোগ্য হয়েছে। যার বর্তমান বাজার দর রয়েছে প্রতিটি ৩৫.৪০ টাকা করে মোট ৯.৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিয়ম বর্হিভূত এই বিনিয়োগ থেকে ৭ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ২৫৪ শতাংশ মুনাফায় রয়েছে।

একমি পেস্টিসাইডসের প্রসপেক্টাসের ১৫৬ পৃষ্টায় ১৫ নম্বর সিরিয়ালে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বিক্রমপুর পটেটো ফ্ল্যাকস ইন্ডাস্ট্রিজের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই কোম্পানিটি একমি পেস্টিসাইডসের আইপিওকালীন ২৮ লাখ বা ২.৬৭ শতাংশ শেয়ার ধারন করে। যে কোম্পানিটি একমি পেস্টিসাইডসের ইস্যু ম্যানেজার শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান মাহফুজা ইউনুসের স্বামী এবং প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের ইউনুস গ্রুপের কোম্পানি। যে গ্রুপের কর্ণধার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস। যে গ্রুপের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন মাহফুজা ইউনুসও।

শাহজালাল ইক্যুইটির প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের বিক্রমপুর পটেটো ফ্ল্যাকস ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) মো. আলমগীর হোসেন অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, মোহাম্মদ ইউনুস শাহজালাল ইক্যুইটির শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালক না। তিনি কোম্পানির নির্বাহিও না। এমনকি তিনি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শাহজালাল ইক্যুইটি থেকে কোন সম্মানি নেন না। ফলে শাহজালাল ইক্যুইটি মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত না বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান না। ফলে বিক্রমপুর পটেটো ফ্ল্যাকস একমি পেস্টিসাইডসের শেয়ার ধারনে পাবলিক ইস্যু রুলসের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।

এই বিষয়ে শীর্ষ এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বানকো ফাইন্যান্সকে যে কারণে এবং যেভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। ওখানে ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং বিএসইসির অন্ত:কলহের কারনে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কমিশনতো সেটা কখনো বলতে পারবে না। এখন বানকোর ন্যায় একই কাজ করেছে শাহজালাল ইক্যুইটি। সেখানে মোহাম্মদ ইউনুসের স্ত্রী চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন। তার অর্থ শাহাজালাল ইক্যুইটির চেয়ারম্যানের স্বার্থ সংশ্লিষ্টরাই তাদের ইস্যু ম্যানেজ করা একমি পেস্টিসাইডসে আইপিওকালীন শেয়ার ধারন করেছিল। এটাই বানকোর ন্যায় শাস্তি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এছাড়া মোহাম্মদ ইউনুস শাহজালাল ইক্যুইটির শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালক হোক বা না হউক, কিংবা কোন সম্মানি নাই নিল, সেটা কোন বিষয় না। তিনি সেখানে একটি প্রধান উপদেষ্টার পদে জড়িত আছেন। যে পদকে কোনভাবেই ছোট করে দেখার এবং তিনি শাহজালাল ইক্যুইটির সঙ্গে জড়িত নেই বলার সুযোগ নেই।

মার্কেট আওয়ার/আউয়াল

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর