ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

ঘুসের অভিযোগ করায় কৃষককে ব্যাংকে আটকে রেখে ‘মারধর’

২০২৩ সেপ্টেম্বর ১৯ ১০:২২:২১
ঘুসের অভিযোগ করায় কৃষককে ব্যাংকে আটকে রেখে ‘মারধর’

ষাটোর্ধ্ব এই কৃষক দেনায়ের সরদার উপজেলার ফুকরা গ্রামের বাসিন্দা। এ সময় তার সঙ্গে থাকা তার ছেলে তকবির সরদার (২৭) ও জামাতা মোতাকাব্বির মুন্সিকেও (২৫) মারধর করা হয়। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।

দেনায়েত সরদার জানান, মাসখানেক আগে তিনি গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের জন্য ৩ লাখ টাকা ঋণ নিতে রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে যান। এ সময় তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও এক কপি ছবি ব্যাংকে জমা দেন। গত ২০ আগস্ট ব্যাংকের তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) রফিজুল ইসলাম সরেজমিন তদন্তের জন্য কৃষকের বাড়িতে যান। মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে কিছু উৎকোচ দাবি করেন। কিন্তু দেনায়ত সরদার উৎকোচ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ওই কর্মকর্তা ‘দায়দেনার’ উল্লেখ করে ঋণের আবেদন বাতিল করেন।

এ বিষয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর কৃষক দেনায়েত সরদার বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ সেলে ই-মেইলের মাধ্যমে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ ও তার সহযোগী অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে যান।

কৃষক জানান, তদন্ত চলাকালে তদন্ত দলের সঙ্গে দেনায়েত সরদারের জামাতা মোতাকাব্বির মুন্সীর বাকবিতন্ডা হয়। তদন্ত উপলক্ষ্যে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ইলিয়াস হোসেন পূর্ব থেকে স্থানীয় কিছু লোকজন সাজিয়ে রাখেন। তদন্ত চলাকালে স্থানীয় ওই লোকজন অতর্কিতভাবে ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করে অভিযোগকারী ও তার সঙ্গে থাকা ছেলে এবং জামাতার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

এক পর্যায়ে তারা ব্যাংকের সবগুলো গেট ও দরজা লাগিয়ে এবং ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে অভিযোগকারী ও তার লোকজনকে তদন্ত কর্মকর্তার সামনেই উপর্যপুরি কিলঘুষি, লাথি ও ফ্লোরে ফেলে পা দিয়ে পিষতে থাকে। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রামদিয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উলটো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিরীহ কৃষক এবং তার লোকজনের কাছ থেকে সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে ছেড়ে দেয়।

মারধরের কথা স্বীকার করে গোপালগঞ্জ কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক শাখার ব্যবস্থাপক ও অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, তদন্তের বিষয়টি ছিল তুচ্ছ ঘটনা। আমি আমার ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনছিলাম। কিন্তু এত মানুষ ব্যাংকে ঢুকবে বুঝতে পারিনি। এই ধরনের জিনিস ঘটবে আমি এটা কল্পনাও করিনি। যা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনাটি আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

তবে, কৃষককে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শাখা ব্যবস্থাপকসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন সাধারণ মানুষ।

মার্কেট আওয়ার/তারিকুল

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর