ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

ভাজি, ডাল-ভাত খেতেই নেই ৭০ টাকা

২০২৩ আগস্ট ২২ ১২:১০:০৫
ভাজি, ডাল-ভাত খেতেই নেই ৭০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : আলমগীর হোসেন ঢাকায় রিকশা চালান সাত বছর ধরে, থাকেন গ্যারেজে। দিনের তিন বেলাই হোটেলে খাবার খান তিনি। সোমবার দুপুরের খাবার সেরে নিজের রিকশায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এর ফাঁকে কথা হয় এ রিকশা চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন হোটেলে ভাজি-ভর্তা আর ডাল-ভাত খেলেও খরচ হচ্ছে অন্তত ৭০ টাকা। আগের চেয়ে যা— দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। কিন্ত আয় তো বাড়েনি!’

নিম্নআয়ের আলমগীরের মতো এমন লাখো মানুষের বসবাস এই নগরীতে। দ্রব্যমূল্যের বেপরোয়া ঊর্ধ্বগতি যাদের জীবন সংগ্রাম আরও কঠিন করে দিয়েছে। সংসার চালাতে প্রতিদিন হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অনেকে জীবনযাপনের মান আরও কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ দেখছেন না তারা। অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি, বাজার ব্যবস্থা বুঝেন না সাধারণ এসব মানুষ—বুঝেন বাজার এখন ভালো নেই।

নগরীর অলি-গলি ঘুরে নিম্নআয়ের মানুষের বর্তমান জীবনযাপনের কিছু অংশের চিত্র উঠে এসেছে আজকের প্রতিবেদনে। তারা বলেন, এখন শুধু নিত্যপণ্য, সংসার চালানোর ব্যয়ই বাড়েনি বরং সব কিছুতেই এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। হোটেলে খাবারের মূল্য তালিকায় বড় পরিবর্তন হয়েছে।

রাজধানীর মহাখালী এলাকায় একটি দোকানে মিস্ত্রির কাজ করছিলেন রামায়ন চন্দ্র রায়। বাইরে কাজের কারণে প্রতিদিন দুপুরে হোটেলেই খাবার খান। তিনি বলেন, ‘দুপুরে হোটেলে ভাত খাওয়ার খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তিন প্লেট ভাত খেলেও এখন খাই দুই প্লেট। দাম বেশি হওয়ার কারণে মাছ, মুরগি খাই না। ভর্তা-ভাজি, ডাল-ভাত খাই। তার খরচও এখন ৭০-৮০ টাকা।’

সিএনজি অটোরিকশা চালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘আগে পরোটা খেতাম ৫ টাকা পিস সঙ্গে ডাল ভাজি ৫ টাকা। সেই পরোটা এখন হয়েছে ১০ টাকা আর ডাল ভাজি ১৫-২০ টাকা। দুপুরে পাঙাস মাছ দিয়ে ২ প্লেট ভাত, ডাল-ভর্তা খেতে লাগছে ১২০ টাকা। তাই ডাল, ভাজি-ভর্তা দিয়েই বেশিরভাগ দিন খাই। আগে এক সময় রাস্তার পাশে হোটেলে গরুর মাংস, ভালো মাছ দিয়ে ভাত খেতাম আর এখন এসবেরর দাম বেড়ে যাওয়ায় ভর্তা-ভাজি, পাঙাস মাছ দিয়ে ভাত খেতে হচ্ছে।’

জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও হোটেলে ডিমের তরকারি ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা, তা এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। পাঙাস মাছের তরকারি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা, এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, রুই মাছের তরকারি বাটি প্রতি বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৪০ টাকা এখন তা বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়া ২০ টাকার সবজি ভাজি এখন ৩০ টাকা, পাতলা ডালের ১০ টাকার বাটিতে ৫ টাকা বেড়েছে। ভাতের প্লেটের দাম বেড়েছে পরিমাণও কমেছে। প্রতি প্লেট ভাত ১০ টাকা থেকে হয়েছে ১৫-২০ টাকা।

এছাড়াও ৬০ থেকে ৮০ টাকা বাটির গরুর মাংস গিয়ে ঠেকেছে ১৫০ টাকায়, কোথাও কোথাও এর চেয়েও বেশি। সেই সঙ্গে ৪০ টাকা বাটির মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে ছোট ছোট বিভিন্ন খাবার হোটেল ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। যেখানে খেটে খাওয়া মানুষ, পথচারী কিংবা কর্মজীবীরাই খেয়ে থাকেন।

রাজধানীর মতিঝিল এলাকার রাস্তার পাশে ভাতের হোটেলের মালিক ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, ‘আসলেই হোটেলে সব খাবারের দামই বেড়ে গেছে। পাঁচ বছর আগে ডিমের তরকারি বিক্রি করেছি ১৫ টাকা, এখন সেটা বিক্রি করছি ৩০-৩৫ টাকায়। কারণ আগের চেয়ে ডিমের দাম দ্বিগুনেরও বেশি হয়েছে। এক সময় সবজি ভাজি বিক্রি করতাম ১৫ টাকায় এখন সেটা ৩০-৪০ টাকা। কারণ সবজির দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি। আলু কিনেছি আগে ১৮ টাকায় এখন সেটা ৪০-৫০ টাকা কেজি। ব্রয়লা মুরগি তরকারি বিক্রি করেছি ৩৫-৪০ টাকা, এখন সেটা ৭০ টাকা, অনেকে ১০০ টাকাও নেয়। আসলে সব কিছুর দাম এতটা বেড়েছে যে, হোটেলে দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘তেলের দাম, গ্যাসের দাম অনেক বেশি বেড়েছে। সব ধরণের সবজির দাম বর্তমান বাজারে আগের চেয়ে দ্বিগুণ, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামও অতিরিক্ত। বার্বুচি, দোকান ভাড়া, কর্মচারী সব কিছুর দামই বেড়েছে। মানুষও হোটেলে এসে আগের চেয়ে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। আগে দুপুরে প্রায় ১৫০ খেত, এখন অর্ধেকে এসে নেমেছে। আবার আগে যারা মাছ মাংস খেত তারা এখন বেশিরভাগ দিন ডাল ভাজি, ভর্তা দিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে নিচ্ছেন।’

বাংলাদেশ হোটেলে মালিক সমিতির সদস্য এরশাদ আলী বলেন, ‘সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় হোটেলের ব্যবসাও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। অবস্থা খুব খারাপ; বিক্রি কমে গেছে, আগের চেয়ে হোটেলে মানুষ কম খাচ্ছে।’

মার্কেট আওয়ার/তারিকুল

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর