ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

ফলে মেশানো হচ্ছে বিষ, নেই প্রশাসনের তদারকি

২০২৩ জুলাই ১৫ ২০:০০:২১
ফলে মেশানো হচ্ছে বিষ, নেই প্রশাসনের তদারকি

প্রতিদিন বাকেরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড উপজেলার বৃহত্তম ফলের বাজার থেকে ফল কিনে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেন ক্রেতারা। মুখে দিতেই বোঝা গেল রসালো এই ফলটি বিষে ভরা।

শুধু আম নয়, মৌসুমি প্রায় সব ফলই এখন বিষে ভরা। বাজারে এখন কেমিক্যাল মিশ্রিত ফলই বেশি। অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকাচ্ছে। কাজটি এমন কৌশলে করা হয় যাতে ক্রেতারা বুঝতে না পারে।

রাসায়নিক মেশানোর পর একদিনের মধ্যে ফল পেকে যায়। কোনোটার রঙ হয় গাঢ় হলুদ, কোনোটা আবার টকটকে লাল। বিক্রির জন্য তাকে সাজিয়ে রাখা হয় দোকানে। জিভে জল আসার মতো এই ফল দেখেই আকৃষ্ট হন ক্রেতারা। ফল ভেবে বিষ কিনে নিয়ে যান প্রিয়জনের জন্য। আম,কাঠাল, কলা, পেঁপেসহ বেশিরভাগ ফলেই কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে।

সাধারণত উৎপাদন প্রক্রিয়ার শুরু হতে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো অবধি নানা পর্যায়ে জেনে না জেনে পোকা দমন, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ফল পাকানো এবং সংরক্ষণের জন্য প্রাণঘাতী রাসায়নিক ব্যবহারিত হচ্ছে। অপরিপক্ব ফলে মাত্রাতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে তা দ্রুত পাকানো হয়। দ্রুত পচন ঠেকাতেও কেমিক্যাল মেশানো হয়।

এসব রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ফল খেয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এ বিষয় নেই বাকেরগঞ্জ প্রশাসনের তদারকি। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া অপরিপক্ব কোনো কোনো ফল পাকাতে ইথোফেনের বাইরে ক্যালসিয়াম কার্বাইডও মেশানো হচ্ছে। রঙ উজ্জ্বল করতে এটি মূলত টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহার হয়। গ্যাস জাতীয় ইথাইলিন ও হরমোন জাতীয় ইথরিল অতিমাত্রায় এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করায় ফলগুলো ঔজ্জ্বল্যের সঙ্গে রীতিমতো বিষে পরিণত হয়। এসব ফল খাওয়ায় মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল। এর জেরে শরীরে বাসা বাঁধে নানা অসুখ-বিসুখ।

এক অনুসন্ধানে উঠে আসে কেমিক্যাল মেশানোর ভয়ংকর চিত্র। উপজেলার সবচেয়ে বড় কয়েকটি ফলের আরতে গেলে দেখা যায়, রাইপেন নামের কেমিক্যাল সহ বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল দিয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে টনকে টন আম সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

এই আম প্রতিদিন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চলে যাচ্ছে। উপজেলা সবচেয়ে বড় ফলের আরত বোয়ালিয়ার মেসার্স কাজী ফল ভান্ডারে দেখা যায়, রাইপেন নামের কেমিক্যাল সহ বিভিন্ন প্রকার স্প্রে দেয়া হচ্ছে আম কাঠালে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় আরতের মালিকপক্ষ ও কর্মচারীরা।

অনুসন্ধান টিম ছুটে যায় উপজেলার বাস স্ট্যান্ড ফলের বাজারে। বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন বাকেরগঞ্জ বরগুনা সড়কের পশ্চিম পাশে সড়কে সেই গড়ে উঠেছে ফলের বাজার। রংবেরঙের ফল দেখে মনে হয় এ যেন এক ফলের রাজ্য টসটসে লাল রঙের আমটি হাত দিয়ে ছুঁয়ে ধরলেই হাতে উঠে আসে সাদা রংয়ের পাউডার।

জানতে চাওয়া হলে দোকানদার জানান, এই আমগুলো ১৫ দিন আগের কেনা পাউডার গুলো দেয়া হয়েছে আম যেন পচন না ধরে এবং আমের রং যেন ভালো থাকে। এই পাউডার কে দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরত থেকেই এই পাউডার দিয়ে দেয় আমরা কিছু দেই না। তবে সমস্যা কি সবাই তো এই আম কিনেই খাচ্ছে।

কাজী ফল আড়ৎ এর ম্যানেজার নুর ইসলাম জানান, স্বাভাবিকভাবে পাকতে দিলে বিক্রির জন্য অপেক্ষমান সময়ে অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাঁচা অবস্থায় কিনে আনা ফল পাকানোর জন্য কৃত্রিম পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, কৃত্রিমভাবে পাকানো ফল খেলে বমি-বমিভাব ও বমি, ডায়রিয়া, বুক ও পেটে জ্বলা, অতিরিক্ত পিপাসা, দুর্বলতা, ঢোক গিলতে ও কথা বলতে কষ্ট হওয়া, হাত ও পায়ের অসাড়তা, ঠাণ্ডা-ভেজা ত্বক ও অস্বাভাবিকভাবে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।

তাছাড়া নিয়মিত খেলে এসব উৎসর্গ মারাত্মক আকার ধারণ করাসহ পাকস্থলী, ফুসফুস, লিভার ও কিডনির গোলাযোগসহ জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া খোসাতে যে রাসায়নিক পদার্থ লেগে থাকে তা সরাসরি খেলে ক্যান্সারও হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্রশীল জানান, এ বিষয়ে জনসচেতনতা অর্জনের ব্যাপারেও সকলকে গুরুত্ব দিতে হবে। ফল কেনার আগে তার গন্ধ দেখে কেনা উচিত। কেননা কৃত্রিমভাবে পাকানো ফলে মিষ্টি গন্ধ থাকে না। এবং আম কাঁঠাল পাকার ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনাগুলোও মেনে চলতে হবে। আমাদের বাজার মনিটরিং টিম রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল দিয়ে ফল পাকাচ্ছে। শিগগিরই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

মার্কেট আওয়ার/তারিকুল

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর