ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে খাদ্য বস্ত্রের সম্মিলিত উত্থান হলেও দুর্দিনে বিমা খাত

২০২৩ জুলাই ০৯ ১৮:০১:৩৯
শেয়ারবাজারে খাদ্য বস্ত্রের সম্মিলিত উত্থান হলেও দুর্দিনে বিমা খাত

শেয়ারবাজারে ফের লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বস্ত্র খাত। এর পরের অবস্থান ছিল খাদ্যের। অন্যদিকে টানা দুই মাস শীর্ষে থাকা বীমা খাত নেমেছে চতুর্থে। লেনদেন কমার সঙ্গে সঙ্গে দরও হারাচ্ছে কোম্পানিগুলো।

লেনদেনের মত দর বৃদ্ধির শীর্ষেও এই দুই খাতের প্রাধান্য দেখা গেছে। কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য, ডিভিডেন্ডের ইতিহাস- এসব বিষয় ‘উহ্য’রেখে কিছু কোম্পানি রীতিমতো ‘উড়ছে’। মিনোরি বাংলাদেশ নামের এক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকা দুই কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ও ফু ওয়াং ফুডসের থামার নামই নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এক্ষেত্রে যে দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শেয়ারবাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রহস্য জনক ভূমিকা নিয়ে চলছে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা পদস্থ কর্মকর্তাদের কারসাজিকারীদের দোসরের ভূমিকায় থাকারও সমালোচনা করছে। যে কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে।

এদিকে, কোরবানির ঈদ শেষে প্রতিদিনই লেনদেন আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতাও বজায় আছে। সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৯২১ কোটি ৪৪ লাখ ১৪ হাজার টাকার শেয়ার। গত ১২ জুনের ৯৮১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার পর এটিই সর্বোচ্চ লেনদেন।

ইউক্রেইন যুদ্ধের পর গতি হারানো শেয়ারবাজারে চলতি বছর ঈদুল ফিতরের পর থেকেই শেয়ারবাজারে একটু একটু করে প্রাণ ফিরতে শুরু করে। শুরুটা হয় তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে। এরপর খাদ্য এবং পরে বীমা খাত থাকে চালকের আসনে। তবে গত কয়েকদিনে বীমা খাতকে ছাপিয়ে উঠে এসেছে বস্ত্র খাত। এখন চালকের আসনে থাকার ক্ষেত্রে চলছে বস্ত্র ও বীমা খাতের স্নায়যুদ্ধ।

তবে যেসব খাতে লেনদেন বাড়ছে, সেগুলোর শক্তিশালী কোম্পানির শেয়ারে আগ্রহ নেই। স্বল্প মূলধনী ও দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারই বেশি হাতবদল হচ্ছে। দরও বাড়ছে এগুলোর। যেমন খাদ্য খাতে তর্কাতীতভাবেই সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বা বিএটিবিসি। কিন্তু এই কোম্পানি ঘুমাচ্ছে ফ্লোর প্রাইসে।

পাঁচ বছর পর উৎপাদনে ফেরা এমারেল্ড অয়েলের দাম হয়ে গেছে তিন মাসের মধ্যে ছয় গুণ। দ্বিগুণ হয়ে গেছে এক যুগেও ডিভিডেন্ড দিতে না পারা শ্যামপুর সুগারের দর। নতুন যোগ হয়েছে ফুওয়াং ফুডস, চার দিনেই দর বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। কারসাজিকারীরা যেন নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

এদিকে, বস্ত্র খাতেও শক্তিশালী কোম্পানি স্কয়ার টেক্সটাইলস, মতিন স্পিনিং মিলসের শেয়ারের ক্রেতা নেই। অন্যদিকে দুর্বল কোম্পানি ঢাকা ডায়িংয়ের দর ৯ দিনে ৩৪ শতাংশ, আট দিনে ২৫ শতাংশ দর বেড়েছে জেনারেশন নেক্সটের।

যেসব কোম্পানি দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে, সেগুলোর অনেকগুলোই সম্প্রতি ফ্লোর প্রাইস ছেড়ে বের হয়ে এসেছে। তবে এখনও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দরে রয়ে গেছে। মোট ১৭৮টি কোম্পানির শেয়ার আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে, তার প্রায় সব গুলোই ফ্লোরে পড়ে আছে।

বস্ত্র-খাদ্যের রমরমা নয়টি কোম্পানির শেয়ার এদিন দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে বস্ত্র খাদের কোম্পানি তিনটি। খাদ্য খাতের একটি।

বস্ত্র খাতের ৫৮টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৬ শতাংশের কিছুটা বেশি। এই খাত শীর্ষে থাকলেও আগের দুই কর্মদিবসে ছিল মোট লেনদেনের ২৫ শতাংশেরও বেশি।

তবে এখনও সবচেয়ে বেশি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে। দর বেড়েছে ১৫টি কোম্পানির, কমেছে ১৩টির, ৩০টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে। এর বেশিরভাগই ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে।

দর বাড়া ১৫টি কোম্পানির মধ্যে একটির দর ১০ শতাংশ, দুটির ৯ শতাংশের বেশি, একটির দর তিন শতাংশের বেশি, তিনটির ২ শতাংশের বেশি, চারটির বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।

খাদ্য খাতের ২১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির, কমেছে সাতটির, একটি ছিল ফ্লোর প্রাইসে আগের দিনের দরে।

এসব কোম্পানির মধ্যে একটির দর ১০ শতাংশ, দুটির ৮ শতাংশের বেশি, তিনটির ৪ শতাংশের বেশি, একটির দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।

এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৯৫ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি, বীমা খাতে ৯৩ কোটি ৩০ লাখ (এর মধ্যে ৭০ কোটি ৮০ লাখই জীবন বীমায়), প্রকৌশল খাতে ৯৩ কোটি ৩০ লাখ এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

ব্যাংক, আর্থিক, সিমেন্ট, টেলিযোগাযোগ খাতে এখনও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই।

আজ সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ করে দর বেড়েছে ফুওয়াং ফুডস ও সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের দর। ঢাকা ডায়িং, খুলনা পেপার, ফুয়াং সিরামিকস, ইয়ানিক পলিমার, জেনারেলন নেক্সট, সিএপিএমআইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ারদরও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। এগুলোর দর ৯.১৬ শতাংশ থেকে ৯.৮৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

আজ সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির মধ্যে আটটিই বীমা খাতের। এই আটটির মধ্যে জীবন বীমা কোম্পানি পাঁচটি। সবচেয়ে বেশি ৬.০১ শতাংশ দর হারিয়েছে সাধারণ বীমা কোম্পানি ইসলামী ইন্স্যুরেন্স।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.১২ শতাংশ দর হারিয়েছে জীবন বীমা কোম্পানি রূপালী লাইফ। ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের দর কমেছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪.৪১ শতাংশ।

নিটোল ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ, সোনালী লাইফ, মেঘনা লাইফ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ছিল এর পরের অবস্থানে। সব কটি কোম্পানির দর কমেছে ৩ শতাংশের বেশি।

দরপতনের শীর্ষ দশে থাকা অন্য দুই কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের দরও তিন শতাংশের বেশি এবং প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ।

মার্কেট আওয়ার/মামুন

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর