ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

একদফার ঘোষণা আসছে ১২ জুলাই

২০২৩ জুলাই ০৯ ১২:৪৪:২৬
একদফার ঘোষণা আসছে ১২ জুলাই

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনবিষয়ক একটি প্রতিনিধি দল গতকাল ঢাকায় পৌঁছেছে। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত তারা থাকবেন। আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে সফর চলাকালেই একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিই একদফার মূল বিষয় হলেও সংসদ বাতিল এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ আরও কিছু দাবি এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া চলতি মাসে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুরও ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। সফরকালে তারও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে দলটি।

এদিকে আগামী বুধবার অনুষ্ঠেয় ওই সমাবেশ থেকে একদফা ঘোষণার পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিও দেওয়া হবে। তবে সে কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত না হলেও এবারের তা হবে অপেক্ষাকৃত কঠোর। দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির মূল টার্গেট এবার রাজধানী ঢাকা। এতদিন ঢাকার বাইরে নানা কর্মসূচি পালন করলেও এবার কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। এক্ষেত্রে ঢাকায় সমাবেশ ও ঘেরাওসহ একাধিক শক্ত কর্মসূচি আসতে পারে। ‘চলো চলো ঢাকা চলো’, সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ে ঢাকায় ‘টানা অবস্থানে’র ঘোষণা আসতে পারে। তবে এসব কর্মসূচিতে জনগণকে ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করাই হবে বিএনপির লক্ষ্য।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী বুধবার একদফার ঘোষণার পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে যুগপতের কর্মসূচি শুরু হতে পারে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতারভাবে এ আন্দোলন চলবে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলনে নামে বিএনপি ও মিত্ররা। এর অংশ হিসেবে গণমিছিল, গণঅবস্থান, মিছিল, সভা-সমাবেশ, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

অন্যদিকে একদফার আন্দোলনে নামার আগে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করতে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে গত বুধবার জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, পরদিন বৃহস্পতিবার ১২ দলীয় জোট এবং শুক্রবার গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। বৈঠকে প্রত্যেকেই একমঞ্চ থেকে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের দাবি, একমঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলে যুগপতের জোটের মধ্যে যে ঐক্য অটুট আছে—দেশবাসীর কাছে সেই বার্তা পৌঁছাবে। ফলে জনগণও ভরসা ও সাহস পাবে এবং আরও ব্যাপক হারে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবে। তবে যেহেতু যুগপতে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে, তাই একদফার এই ঘোষণা কীভাবে আসবে— তা নিয়ে শরিকদের এখনো কিছু জানায়নি বিএনপি। তবে গণতন্ত্র মঞ্চ ও যুগপতের বাকি মিত্রদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলটি।

এ নিয়ে আগামীকাল সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের কথা রয়েছে। আর ১২ জুলাইয়ের আগে যুগপতের বাকি শরিক গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের (দুই অংশ) সঙ্গেও বৈঠক করবে দলটি। তবে কৌশলগত কারণে অতীতের মতো এবারও জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হবে না। এক্ষেত্রে ভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে দলটি।

জানা গেছে, বিএনপি এসব বৈঠকে একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ঢাকায় সমাবেশ ও ঘেরাওয়ের কথা ভাবছে জানিয়ে আরও কী কী কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে—জোট নেতাদের সেই প্রস্তাবনা দেওয়ার আহ্বান জানায় দলটি। তখন কেউ কেউ ঢাকায় অবস্থান ধর্মঘট, ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ বা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির কথা বলেন। কেউ আবারও জেলা-বিভাগীয় সভা-সমাবেশের মতো সাধারণ কর্মসূচির কথাও বলেন। এ সময় বিএনপির তরফ থেকে বলা হয়, একই কর্মসূচিতে তারা আর যেতে চায় না। এবার শক্ত কর্মসূচি দিতে হবে।

একদফা আন্দোলনের কর্মসূচির বিষয়ে তিন জোটের তিনজন নেতা বলেন, বৈঠকে নতুন কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা ঢাকাকেন্দ্রিক এবং ঢাকার বাইরে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচির প্রস্তাব করেছি। তবে বিএনপি যেহেতু বড় দল, সে কারণে কর্মসূচি প্রণয়নের বিষয়টিও তাদের দিয়েছি। তারাই কর্মসূচি ঠিক করবে। আমরা সহায়ক হিসেবে সেসব কর্মসূচি সাধ্যমতো পালনের চেষ্টা করব।

যুগপতের জোটের এক নেতা বলেন, ফাইনালি ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে বিরোধী দলের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সরকার বা তৃতীয় পক্ষ যাতে সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে না পারে—সে ব্যাপারে বিএনপিকে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আমরা একই ধরনের কর্মসূচির কথা আর চিন্তা করছি না। কর্মসূচির ধরনে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, এই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য সাংগঠনিকভাবে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব।

একদফার আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। অতি শিগগিরই চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এবারের আন্দোলন হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন। এই আন্দোলন দেশের সব মানুষ সম্পৃক্ত হবে এবং জনগণ তার অধিকার আদায় করে নেবে।

একদফার ঘোষণাকে সামনে রেখে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএনপির সঙ্গে ইতোমধ্যে হওয়া বৈঠকগুলোতে যুগপতের শরিকদের দেওয়া নানা প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে আন্দোলনের অভিন্ন একদফার পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখা ঘোষণা নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। মূলত বিএনপির ২৭ দফা ও গণতন্ত্র মঞ্চের ৩৫ দফার আলোকে এ রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩১ দফার একটা খসড়া রূপরেখা প্রণয়নও করেছে বিএনপি। তবে এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের ১৩ দফা এবং গণফোরাম (মন্টু) ও বিপিপির ৭ দফাকে তেমন বিবেচনা করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

আর রূপরেখা প্রণয়ন নিয়ে সমন্বয়হীনতার অভিযোগও রয়েছে অনেক দলের। তাই এই সমন্বয়হীনতা নিরসনে বিএনপিকে যুগপতের সব দলকে নিয়ে একত্রে একটি বৈঠক ডাকার প্রস্তাব দিয়েছে গণফোরাম-বিপিপি। যেখানে প্রতিটি দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি থাকবে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

মার্কেট আওয়ার/তারিকুল

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর