ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

মুখের কথা চোখের জলে লিখলেন তামিম

২০২৩ জুলাই ০৭ ১০:৩৫:৪২
মুখের কথা চোখের জলে লিখলেন তামিম

সংবাদ সম্মেলনে ১৩ মিনিট কথা বলেছেন তামিম। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন; কথা বলার মতো অবস্থা হারিয়েছেন। আবেগে আপ্লুত তামিম যেন অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেননি। অদৃশ্য কোনো শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা ছিল তার কণ্ঠ! না হলে কি তামিম বলতেন, ‘সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়, অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে; আমার মনে হয়

না, বলার দরকার আছে।’ এরপর আবার যখন বললেন, ‘আমার টপিক এখানেই শেষ করে দিন।’ এরপর তো বলতে না চেয়েও তামিম অনেক কিছুই বলে দিলেন। নিজেকে নির্ভার করলেন কি না, কে জানে সে কথা!

অনেকদিন ভেবেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম। কিন্তু তার সংবাদ সম্মেলন তো বলছে ভিন্ন কথা। অনেকদিন ভাবলে সিরিজের মাঝপথেই বা কেন এমন সিদ্ধান্ত! কেন আগে কিংবা পরে নয়? আবার বছরটাও তো বিশ্বকাপের। আর তিন মাস পরই বাংলাদেশের ‘স্বপ্নতরী’র মাঝি হয়ে ভারতে যাওয়ার কথা ছিল তার। অথচ তার

আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই বিদায় বলে দিলেন তিনি। তামিম না হয় ‘গুডবাই’ বললেন; কিন্তু এ সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কী ঘটেছিল, সেগুলোও তো জানা দরকার।

করোনা-পরবর্তী সময়ে চোট ও ফিটনেস নিয়ে ভালোই ভুগছিলেন তামিম। দুটোর সঙ্গে যোগ হয় পারফরম্যান্সের ঘাটতি। ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে দেশের বাইরেও গিয়েছিলেন তিনি। উন্নতি হয়েছে, আবার অবনতিও হয়েছে। ওঠানামার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল সবকিছু—পারফরম্যান্সও তাই। কিন্তু দল থেকে বাদ পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি তার, তবে চোটের জন্য বেশ কয়েকটি সিরিজের আগে ছিটকে গিয়েছিলেন।

এসব নিয়ে বিসিবি থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্টের আলোচনার খোরাক হয়েছিলেন তামিম। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটা নিয়মিত ঘটনা। হরহামেশাই পারফরম্যান্স নিয়ে এমন সমালোচনা নতুন নয়।

কিন্তু তামিমের আঘাত লেগেছে কোথায়! আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজের আগে সামান্য চোট নিয়েই খেলার জন্য ফিট আছেন বলে জানিয়েছিলেন তামিম। অধিনায়কের মন্তব্য ছিল, ‘আমিও দেখতে চাই, আমি কতটা মানিয়ে নিতে পারছি। এমন কিছু করব না যাতে দলের ক্ষতি হয়।’ তার এমন বক্তব্যের পর চটেছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, বিষয়টি ভালোভাবে নেননি প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও—গণমাধ্যমে এমন খবর চাউর হয়। তার পরও বুধবার প্রথম ওয়ানডের টস করতে আসা তামিমকে দেখে স্বস্তি মিলেছিল বাংলাদেশ দলে। এত কিছুর পরও তামিম যখন বলেন, সিদ্ধান্তটা অনেক দিনের, তখন আসল কারণ না খুঁজে তো উপায় নেই।

তামিমের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, চাপে পড়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে। তবে এটাও নিশ্চিত করেছেন যে, বোর্ড কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে অবসর না নিতে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল তামিমকে। সূত্রের কথার প্রমাণ মিলেছে তামিমের ডাকা সংবাদ সম্মেলন ঘিরে চলমান ঘটনাগুলোতেও। ম্যাচ শেষ করে রাত ১২টার দিকে টিম হোটেলে ফিরেছিলেন ক্রিকেটাররা।

ঘণ্টাখানেক যেতেই চট্টগ্রামের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বদলে যায়। হঠাৎ করে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত জানান ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এর পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বোর্ড কর্তা থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা। রাতভর চেষ্টা করেও সফল হননি তারা।

সকাল হতে হতে ঘটনা আরও ঘোলাটে হতে শুরু করে। প্রথমে তামিমের রুমে গিয়েছিলেন দলের সঙ্গে থাকা টিম ম্যানেজার তার বড় ভাই নাফীস ইকবাল। দীর্ঘ আলাপের পর ব্যর্থ হয়ে বেরিয়ে যান তিনি। এরপর বিসিবি পরিচালকরা ফোনে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ করেছিলেন। অন্তত বিশ্বকাপ পর্যন্ত দলকে নেতৃত্ব দিতে তামিমকে বলেছিলেন তারা। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন তামিম।

সূত্র বলছে, ‘নিজেদের একরকম ইমেজ দেখাবেন, এরপর রাগ করে চলে যেতে চাইলে তখন আবার আটকাতে চাইবেন, এটা কেমন।’ অর্থাৎ বিষয়টি পরিষ্কার, বিভিন্ন কারণে চাপে রাখার ফলই তামিমের এমন কঠিন সিদ্ধান্ত। যে কথা তামিম বলতে চাননি, জানতেও নিষেধ করেছিলেন। তবে বিসিবি, টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা প্রধান কোচের সঙ্গে তামিমের বৈরিতা বাংলা সারাংশের মতো করে বললে, ‘ছোট ছোট বালুকার কণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।’ আসলে বিন্দু বিন্দু ক্ষোভ জমেই তামিম অবসর নিতে বাধ্য হলেন।

মার্কেট আওয়ার/মোর্শেদ

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

খেলাধুলা এর সর্বশেষ খবর

খেলাধুলা - এর সব খবর