ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

ডলারের ধাক্কায় সাবমেরিন কেবল প্রকল্পের ৩৬২ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি

২০২২ নভেম্বর ২১ ০৭:২৩:১১
ডলারের ধাক্কায় সাবমেরিন কেবল প্রকল্পের ৩৬২ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ডলারের বিনিময় হারে তারতম্যের কারণে প্রকল্পটির খরচ বাড়ছে ১৫৬ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য কারণে আরও প্রায় ২০৬ কোটি টাকা বাড়ছে। সবমিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ৩৬২ কোটি সাত লাখ টাকা।

এজন্য ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রথম সংশোধন করা হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে।

তবে বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে এ ধরনের প্রকল্প অনুমোদন বা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রকল্প তো সংশোধন করার কথা নয়। কেননা দেশীয় টাকায় বিদেশ থেকে ডলারে মালামাল কিনতে হবে। কিন্তু সার্বিকভাবে ডলার সংকট চলছে। সেখানে সরকারিভাবেই এমন প্রকল্প নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ রকম প্রকল্পের বাস্তবায়ন যাতে ধীরে হয় সেটিই মঙ্গল। তবে বিদেশি অর্থায়ন থাকলে তাহলে ব্যয়ও বাড়ত, লাভও হতো। এ প্রকল্পে দেখা যাচ্ছে বৈদেশিক কোনো ঋণ নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আজম আলী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে। এখানে ১৬-১৭টি দেশের পার্টি যুক্ত আছে। আমরা যদি দেরি করি তাহলে তারাই আমাদের কনসোর্টিয়াম থেকে বের করে দেবে। এতে ইতোমধ্যেই পেমেন্ট করা ৫০ শতাংশ ডলার কোনো কাজে আসবে না। তাই এ প্রকল্পটিতে ২-৩ মাস দেরি করার সুযোগ নেই। এজন্য সংশোধনী করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এখন নতুন করে ৩৬২ কোটি ৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ৫২.২৩ শতাংশ।

প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে বিভিন্ন মালামাল বিদেশ থেকে কিনতে ডলারের সংস্থান ধরা ছিল। প্রকল্পটি যখন অনুমোদন পায় তখন প্রতি ডলার ধরা হয় ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা করে। কিন্তু পরবর্তীকালে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ফলে আমদানির জন্য যে টাকা ধরা ছিল তা সংকুলান হচ্ছিল না। এরপর গত সেপ্টেম্বর মাসের হিসাব অনুযায়ী প্রতি ডলার ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা করে ধরে সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত ১৫৬ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

প্রকল্পটির পণ্য সরবরাহকারী কনসোর্টিয়ামের সর্বশেষ বাজেট অনুযায়ী ১৩ হাজার ২০০ জিবিপিএস-এর জন্য ৯২.৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে। কিন্তু মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বরাদ্দ আছে ১৭.৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাশাপাশি সাবমেরিন ক্যাপাসিটি ইনিশিয়াল লাইট আপের জন্য অতিরিক্ত এক মিলিয়নসহ মোট ৩ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির মোট ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এ প্রকল্পটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে কারণ হলো এ ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এমন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের বিকল্প নেই। ব্যান্ড উইথ বা ইন্টারনেট ছাড়া এখনো চলাই যায় না। এছাড়া করোনা মহামারির সময় দেখা গেছে ইন্টারনেটের কতটা ভূমিকা ছিল। ফলে ডলারের সংকট এবং রেট বৃদ্ধি পেলেও প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

আলম/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর