ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিএসইসির নজরদারিতে খান ব্রাদার্সের শেয়ার কারসাজি

২০২৩ জুলাই ০১ ১৮:০০:৩৮
বিএসইসির নজরদারিতে খান ব্রাদার্সের শেয়ার কারসাজি

খারাপ পারফরমেন্সের লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ার কেবল কারসাজির কারণেই ধারাবহিকভাবে বাড়ছে। সর্বশেষ সোমবারও শেয়ারটি ৯.৯৫ শতাংশ বেড়ে ২৩ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রেতাশুন্য থেকেছে। এর মাধ্যমে দুর্বল কোম্পানিটির শেয়ার ধারাবাহিকভাবে ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ শেয়ারে পরিণত হয়েছে।

গত ১৬ এপ্রিল কোম্পানিটির দর ১০ টাকার নিচে ছিল। যা সর্বশেষ ২৩ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। দুই মাসের ব্যবধানের শেয়ারটির দর বেড়েছে ১২৩ শতাংশ।

শেয়ারটির এই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে দুই বার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করেছে।

জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শেয়ারটির অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়ার পেছনে কোনো কারণ তাদের জানা নেই। তারপরও শেয়ারটির দর অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারির সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সময়ে বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো অর্ডার না পাওয়ায় কোম্পানিটির উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয়ভাবে পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে কোম্পানিটির উৎপাদন আংশিকভাবে চালানো হয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেসবুকে একটি চক্র শেয়ারটির দর আরও অনেক বাড়বে বলে গুজব ছড়াচ্ছে। যে কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটির প্রতি অতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে শেয়ারটির চাহিদা বাড়ছে, বাড়ছে দরও।

এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, খান ব্রাদার্সসহ যে সকল জাঙ্ক শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই কোম্পানিগুলোর বিএসইসির নজরে এসেছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম আর্থিক প্রতিবেদনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ছে কি না তা তদন্ত করার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা খান ব্রাদার্সসহ অন্য জাঙ্ক শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। শেয়ারটির সাম্প্রতিককালের লেনদেন ও দর বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার ওপরও নজর রাখছে কমিশন। কারসাজি হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর্থিক প্রতিবেদন :চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২৩) খান ব্রাদার্সের শেয়ারপ্রতি লোকসান হযেছে ০১ পয়সা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ০৪ পয়সা। এদিকে, অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে বা ৯ মাসে (জুলাই’২২-মার্চ’২৩) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০৩ পয়সা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১৬ পয়সা।

নিরীক্ষকের মতামত :খান ব্রাদারের অডিটর আর্থিক বিবরণীতে কোম্পানির পণ্য ও কাঁচামাল, স্থায়ী সম্পদ এবং এফডিআর-এর বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের তিনটি অভিযোগ তুলেছে।

প্রথমত, অডিটর তার মন্তব্যে কোম্পানিটির দেখানো পণ্য ও কাঁচামালের মজুদ একেবারেই নগণ্য বলে অভিহিত করেছে।

দ্বিতীয়ত, অডিটর তার মন্তব্যের কলামে উল্লেখ করেছে, খান ব্রাদার্সের ১৪ কোটি ০৮ লাখ টাকার সম্পত্তির সম্পত্তির অস্তিত্ব খুঁজে বের করা যায়নি। অডিটর বলেছে, কোম্পানিটির সম্পত্তির মালিকানা দলিল, খাজনা রশিদ ও আনুষঙ্গিক কাগজ-পত্রাদি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তৃতীয়ত, আর্থিক কেলেঙ্কারির শিকার পিপলস লিজিংয়ের কাছে থাকা কোম্পানির ৩০ লাখ টাকা স্থায়ী বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে। যদিও ওই টাকার পুরোটাই লাপাত্তা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মার্কেট আওয়ার/মামুন

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর