ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

রাজনীতির পালে লেগেছে সংলাপের হাওয়া

২০২৩ জুন ০৯ ১১:২০:৫৮
রাজনীতির পালে লেগেছে সংলাপের হাওয়া

গত মঙ্গলবার (৬ জুন) আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের এক সমাবেশে প্রথম সংলাপ নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু।

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আসুক। আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই।’ পরের দিন (৭ জুন) এ ইস্যুতে গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে অবস্থান পরিষ্কার করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’ একই দিনে নিজের দেয়া আগের বক্তব্য থেকে কিছুটা সরে আসেন আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে, দাওয়াত করে এনে খাওয়াবো। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি। নব্বই পরবর্তী রাজনৈতিক ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়, নির্বাচন এগিয়ে এলেই সামনে আসে সংলাপ প্রসঙ্গ। এসব সংলাপ কখনো হয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, কখনো নেতাদের মধ্যে। কখনো আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদেরও দেখা গেছে সংলাপের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তাদের ক্ষমতার শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামে প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি। ’৯৪ সালের ৩১ আগস্ট সরকারি ও বিরোধী দলের দুই উপনেতার বৈঠক হয়। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সে সময়ের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয় বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের। উদ্যোগ নেয়া হয় দুই প্রধান নেত্রীর বৈঠকের। কমনওয়েলথ মহাসচিব এনিয়াওকুর এমেকা ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসে দেখা করেন দুই নেত্রীর সঙ্গে। এমেকা পরে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান স্যার স্টিফেন নিনিয়ানকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক সংলাপ তত্ত্বাবধানে তার বিশেষত্ব ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে তিনি সফল হননি। ১৯৯৫ সালে আবার সংলাপের প্রস্তাব আসে সে সময়ের বিরোধীদল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তখনকার সংসদ উপনেতা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তবে সংলাপ ব্যর্থ হলেও ১৯৯৬ সালে এক তরফা নির্বাচন করেও টিকতে পারেনি বিএনপি। আওয়ামী লীগসহ অন্য বিরোধীদলগুলোর আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় বিএনপি। ২০০১ সালেও নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দ্বন্দ্ব হয় আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে। সে সময় মধ্যস্থতার জন্য এসেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। তিনিও সংলাপ করেছিলেন দুই পক্ষের সঙ্গে। তার সে প্রচেষ্টাও ফলপ্রসূ হয়নি। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সে সময়ের সরকারি দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এবং বিরোধীদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল দফায় দফায় বৈঠক করেন। তিন সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিক সংলাপে বিএনপি মহাসচিবের কাছে ২৯ দফা প্রস্তাব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। ছয় দফা বৈঠক করেও তারা কোনো সমাধানে আসতে পারেননি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালের শেষ দিকে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘ মহাসচিরের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। দুই দলের শীর্ষ নেতা, বিশিষ্ট নাগরিক ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অন্তত ২৫টি বৈঠক হয়। কোনো বৈঠকই সফল হয়নি। এর আগে, ওই বছরের ২৬ অক্টোবর টানটান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণবভবনে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন করেন সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে। এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও আনুষ্ঠানিক সংলাপ হয় দুই রাজনৈতিক জোটের মধ্যে। ’১৮ সালের পয়লা নভেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত সে সংলাপে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন। আর আওয়ামী জোটের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪ দলের নেতারা। এবার দ্বাদশ জাতীয সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আনুষ্ঠানিক সংলাপের কথা এখনো সামনে আসেনি। তবে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত গেল কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। কখনো দুই দলের নেতারা একত্রে বসেছেন তার সঙ্গে। কখনো আবার আলাদা।

মার্কেট আওয়ার/মোর্শেদ

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর