ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

থেমে গেল বিডি ওয়েল্ডিংয়ের উৎপাদনে ফেরার প্রক্রিয়া

২০২৩ জুন ০২ ১১:২৭:১৬
থেমে গেল বিডি ওয়েল্ডিংয়ের উৎপাদনে ফেরার প্রক্রিয়া

কোম্পানিটিকে উৎপাদনে ফেরাতে আলিফ ইন্ডাষ্ট্রিজের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের মালিকরা এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কর জটিলতার কারণে তারাও অবশেষে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, তার ভাই আমিনুল হক শামীম এবং ভাতিজা সামিউল হক সাফা কোম্পানিটির মালিকানায় আসার কথা ছিল। তারা কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩১ শতাংশ শেয়ার ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকায় কিনে নেয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতিও পেয়েছিলেন। কিন্তু কোম্পানিটির কর জটিলতার কারণে সেই শেয়ার তারা অধিগ্রহণ থেকে পিছিয়ে যান।

মেয়র ইকরামুল হক টিটু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের পরিচালক। তার ভাই শামীম রয়েল টিউলিপের এমডি। আর সামিউল হক সাফা এমডি’র ছেলে।

ওই তিন পরিচালক বিডি ওয়েল্ডিংয়ের মালিকানায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শেয়ার কিনবেন। বিএসইসির অনুমোদন অনুযায়ি, গত ২৪ এপ্রিল আইসিবির শেয়ার কিনে নেয়ার কথাও ছিল। কিন্তু তারা আইসিবির শেয়ার নেননি।

বিএসইসির শর্ত অনুযায়ি, তারা বিডি ওয়েল্ডিংয়ের এমডির শেয়ার কিনে কোম্পানির পর্ষদে এসে কোম্পানিকে উৎপাদনে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করবেন।

এর আগে, আলিফ গ্রুপ জুলাই ২০১৯ সালে কোম্পানিটি অধিগ্রহণে আগ্রহ দেখিয়েছিল, কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত আলিফ গ্রুপ আর এগোয়নি।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে বিডি ওয়েল্ডিং বন্ধ হয়ে পড়লে কোম্পানিটির প্রায় ১৭ কোটি টাকা কর বকেয়া ছিল। কর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২২ সালের শেষে বকেয়া কর প্রায় ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এরমধ্যে কোম্পানিটির এমডি নুরুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন।

এ বিষয়ে মেয়র একরামুল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিএসইসি মালিকানা হস্তান্তর অনুমোদন করেছে। কিন্তু শেয়ার হস্তান্তর চুক্তি এখনও স্বাক্ষরিত হয়নি।

তিনি বলেন, "কোম্পানির মূল উদ্যোক্তা এমডির উত্তরসূরিদের অসহযোগিতা এবং এনবিআরের ট্যাক্স জটিলতা সহ বিভিন্ন অসুবিধার সৃষ্টি হওয়ায় আমরা এটি নিতে আগ্রহী বোধ করিনি।"

এ বিষয়ে কোম্পানির সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান উদ্যোক্তার ছেলে এস এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, "আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে এমওইউতে সই করেছিলেন। শেয়ারগুলো এখনো আমার বাবার বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্টে রয়েছে। আগ্রহী পক্ষ এখনো কিছু জানায়নি, তারা শেয়ার নেবে কি, নেবে না।"

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আগ্রহী পক্ষকে স্পন্সর ও পরিচালকদের সম্পূর্ণ শেয়ার অধিগ্রহণের অনুমতি দেয়।

এছাড়াও কমিশন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও মূল উদ্যোক্তার শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।

তারপর থেকে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, মেয়র পরিবার এখনও কোম্পানিটির প্রধান শেয়ারহোল্ডার আইসিবির সাথে শেয়ার স্থানান্তর চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেনি।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আইসিবি এবং প্রধান উদ্যোক্তা যৌথভাবে ৩১.০১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে। এরমধ্যে আইসিবির কাছে রয়েছে ২৫.২৫ শতাংশ এবং কোমম্পানির এমডি নুরুল ইসলামের নামে রয়েছে বাকি ৫.৭৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে আইসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী শেয়ার ট্রান্সফার চুক্তি সম্পাদনের সব ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আগ্রহী পক্ষ চুক্তি স্বাক্ষর করতে এগিয়ে আসেনি। এছাড়াও, তারা কোন আপডেটও জানায়নি।

আইসিবি তার সম্পূর্ণ শেয়ার প্রতি শেয়ার ১৭ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করবে এবং কোম্পানির এমডি নুরুল ইসলামের পরিবার প্রতিটি শেয়ার ১৭ টাকা করে পাবেন।

বিডি ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস লিমিটেড ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এটি ছিল প্রথম ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোড উৎপাদন কোম্পানি।

১৯৯৯ সালে কোম্পানিটি চট্টগ্রামে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। ২০১৭ সালে ঋণ খেলাপির কারণে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হলে এটি সংকটের মুখে পড়ে।

মার্কেট আওয়ার/মামুন

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর