ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

রিটার্ন না দিলে বেতন বন্ধ সরকারি কর্মকর্তাদের

২০২৩ মে ২৮ ০৯:১৪:২১
রিটার্ন না দিলে বেতন বন্ধ সরকারি কর্মকর্তাদের

রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র ও উৎসে কর কর্তন করে জমার বিষয়টি নিয়ে দেশের সব কর অঞ্চল কাজ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলার সব দপ্তর প্রধান, অ্যাকাউন্টস অফিসকে বিষয়টি জানিয়ে এরই মধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে।

কর অফিস থেকে বিষয়টি মনিটরিংও করা হচ্ছে। আয়কর রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে চলতি বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে ১৮৪এ ধারা সংযোজন করা হয়েছে। আবার উৎসে করের ক্ষেত্রেও প্রুভ অব সাবমিশন অব রিটার্ন (পিএসআর) বা আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র ব্যতীত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও বিল অনুমোদন না করতে বলা হয়েছে। করলে অনুমোদনকারীকে খেলাপি করদাতা বিবেচনায় সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। বর্তমানে উৎসে কর থেকে আয়কর লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬০ শতাংশ আদায় হয়। একাধিক কর অঞ্চল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্রমতে, কর অঞ্চল সিলেটের আওতাধীন সার্কেল-১৩ (মৌলভীবাজার) থেকে মৌলভীবাজার জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ১৫ মে উপকর কমিশনার এনামুল হাছান-আল-নোমানের সই করা চিঠিতে বলা হয়, অর্থ আইন, ২০২২-এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ১৮৪এ ধারা প্রতিস্থাপন বা সংযোজন করা হয়েছে। এই ধারার ১৮৪এ(৫) মাধ্যমে ‘প্রুফ অব সাবমিশন অব রিটার্ন (পিএসআর)’ বা আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র যাচাই ব্যতীত সকল ধরনের বিল, পেমেন্ট প্রদান বা অনুমোদনযোগ্য নয়। ধারা ১৮৪এ(৭) ধারায় পিএসআর যাচাই ব্যতীত সকল ধরনের বিল, পেমেন্ট প্রদান বা অনুমোদন করা হলে সংশ্লিষ্ট অনুমোদন বা পেমেন্ট প্রদানকারী খেলাপি করদাতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এতে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ব্যক্তিগতভাবে জরিমানার বিধান করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, জেলার সকল ধরনের বিল এবং ১৮৪এ(৩) ধারায় বেতন বিলসহ সরকারি চাকরিজীবী, সংস্থা, করপোরেশনের কর্মরতদের বেতনসহ অন্যান্য ভাতা প্রদান বা অনুমোদনের আগে পিএসআর যাচাই করার অনুরোধ করা হয়। যাচাই করা তথ্য উপকর কমিশনারের কার্যালয়কে অবহিত করতেও অনুরোধ করা হয়। অপরদিকে একই বিষয়ে পিএসআর যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে একই জেলার সকল দপ্তর প্রধানকে ১৭ মে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, মোট আয়কর লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দেয় উৎসে কর। বর্তমানে ৫২টি খাত থেকে এ কর আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার, শিক্ষা প্রকৌশল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভিন্ন প্রকল্প থেকে জেলায় সবচেয়ে বেশি উৎসে কর আদায় হয়। ফলে উৎসে কর আদায়ে সব কর অঞ্চল সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে। সঠিকভাবে উৎসে কর আদায় করে জমা দিতে জেলার সব দপ্তর প্রধানদের চিঠি দেয়া হয়েছে। মৌলভীবাজার সার্কেল থেকে ৪ এপ্রিল সব দপ্তর প্রধানদের চিঠি দেন উপকর কমিশনার এনামুল হাছান-আল-নোমান।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৫৮(৩) ধারা ও বিধি ১৮(৭) অনুযায়ী উৎসে কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ কর কর্তন পরবর্তী মাসের ২০ তারিখের মধ্যে আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে কর্তন করা উৎসে করের প্রতিবেদন উপকর কমিশনারের কার্যালয়কে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়। অপরদিকে একাধিক কর অঞ্চলের একাধিক সার্কেল থেকে একই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সিলেট কর অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা বলেন, রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বা পিএসআর নিশ্চিত করতে এই কর অঞ্চলের আওতাধীন মৌলভীবাজার জেলার উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সব দপ্তর প্রধান ও অ্যাকাউন্টস অফিসকে সার্কেল-১৩ (মৌলভীবাজার) উপকর কমিশনারের কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে উৎসে কর কর্তন করে জমা দিতে এবং তার প্রতিবেদন দিতেও চিঠি দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা কঠোরভাবে বিষয়টি মনিটরিং করছেন। ব্যর্থতায় শাস্তির কী বিধান রয়েছে, তাও চিঠিতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে ভালো ফলাফল আসতে শুরু করেছে।

অপরদিকে যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিলের ব্যর্থতায় আয়কর অধ্যাদেশের ৫৭ ও ১২৪ ধারায় জরিমানার বিধান রয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, সরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠান, করপোরেশন, কর্তৃপক্ষ, প্রকল্প, প্রোগ্রাম, সংস্থা, ইউনিট বা সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে-এমন কোনো কর্মকাণ্ডে উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে খেলাপি করদাতা হিসেবে গণ্য করা হবে। এতে এই বিধান পরিপালনের ব্যর্থতায় সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ও ১২৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানার বিধান রয়েছে।

এই বিষয়ে এনবিআরের আয়কর বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, উৎসে কর থেকে বেশি কর আদায় হয়। সেজন্য সারাদেশে কর কর্মকর্তারা সব জায়গায় চিঠি দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে কঠোর মনিটরিং করা হচ্ছে, যার ফলে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি উৎসে কর আদায় হচ্ছে। আর যেকোনো সরকারি অফিস, সংস্থা ও করপোরেশনে উৎসে কর কর্তন ও জমার বিষয়ে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সচেতনতা বেড়েছে।

মার্কেট আওয়ার/মামুন

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর