ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

আইন লঙ্ঘন করে সোনালী আঁশের ডিভিডেন্ড

২০২২ নভেম্বর ১৯ ০৭:৪২:৩৯
আইন লঙ্ঘন করে সোনালী আঁশের ডিভিডেন্ড

শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষ বলছে, কোম্পানিটি আইন মেনে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। এর ফলে নিয়মের বাইরে যে পরিমাণ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছে তার বিপরীতে তাদের ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির করার জন্য সোনালী আঁশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড না দিয়ে বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ২ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই বোনাস ডিভিডেন্ডের ফলে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি পাবে। তারপরও ৩০ শতাংশের নির্দেশনা পরিপালন হবে না।

নিয়ম অনুযায়ী, মুনাফার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ এবং সমপরিমাণে ক্যাশ ও বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে হয়। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি দ্বিতীয় বিধান লঙ্ঘন করেছে। অর্থাৎ নিয়ম বহির্ভূতভাবে বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। নিয়ম ভঙ্গের দায়ে কোম্পানিটিকে ১০ শতাংশ অর্থাৎ ২৭ লাখ ১২ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে।

কোম্পানিটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে অনুযায়ী, আগের ২০-২০২১ অর্থবছরে কোম্পানির কর বাদে মুনাফা হয়েছিল ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ১১৮ টাকা। সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কর বাদে মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৩ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ৭৫ লাখ ৭০ হাজার ১২৫ টাকা বেড়েছে। তাতে ২০২২ সালে কোম্পানিপির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৯২ পয়সা। যা আগের একই সময়ে ইপিএস ছিল ১ টাকা ১৩ পয়সা। অর্থাৎ ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ।

মুনাফা বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রত্যাশা ছিল গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেবে কোম্পানিটি। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সেই আশা পূরণ হয়নি।যদিও কোম্পানির বোনাস ডিভিডেন্ডে বিনিয়োগকারীরা খুশী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আইন অনুযায়ী কোম্পানির মোট মুনাফার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিতে হয়। অন্য একটি আইনে বলা হয়েছে, ক্যাশ ও বোনাসের। এর ব্যত্যয় হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, কোম্পানি যদি যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারে তবে বিএসইসি প্রস্তাব বিবেচনা করবে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে বোনাস ডিভিডেন্ডের বিষয়টি কমিশন বাতিল করতে পারে।

এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, কী কারণে কোম্পানিটি এত পরিমাণে বোনাস শেয়ার ডিভিডেন্ড দিচ্ছে তা বিএসইসিকে খতিয়ে দেখা উচিত। যৌক্তিক কারণ না থাকলে বোনাস শেয়ারের প্রস্তাব বাতিল করা উচিত।

কেন জরিমানা?

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে অন্তত অর্ধেক বোনাস ও অর্ধেক নগদ দেওয়ার বিধান রয়েছে। সোনালী আঁশের পরিচালনা পর্ষদ সেই আইন ভঙ্গ করে ১০০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড করেছে।

অর্থাৎ শতভাগ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে শাস্তি হিসেবে কোম্পানিকে বোনাস শেয়ারের ওপর ১০ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে।

আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা সংযোজন

অর্থ আইন, ২০১৯ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা (১৬ নম্বর) সংযোজন করা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিকে বোনাস ডিভিডেন্ডের কমপক্ষে সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে হবে। যদি স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের চেয়ে বেশি হয় তাহলে যে পরিমাণ স্টক ডেভিডেন্ড দেওয়া হবে বা হয়েছে তার পুরোটার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এ কর কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের আগে পরিশোধ করতে হবে। এটি অন্য কোনো করের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না।

১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সোনালী আঁশ ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে শেয়ার হোল্ডারদের ১০ শতাংশ করে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তবে ২০১০ সালে ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ২০ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৫০.৭৮ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫.৬৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৪৩.৫৯ শতাংশ শেয়ার।

এএসএম/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর