ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম আরো বাড়বে

২০২৩ মে ২৬ ২০:১০:৩৯
দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম আরো বাড়বে

একইসঙ্গে, কাঁচামাল ও মাইক্রো পার্টস আমদানিতে বিদ্যমান কর অব্যাহতি সুবিধার কিছু শর্ত শিথিল করা হবে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থানীয় উৎপাদকদের মূল্য সংযোজন বাড়াতে সরকার সেলুলার ফোনের কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির এ পরিকল্পনা করছে।

তবে সংশ্লিষ্ট শিল্পের ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, এতে স্থানীয় প্রস্তুতকারক এবং অবৈধ আমদানিকারকদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। বর্তমানে এই ধরনের আমদানিকারকদের দখলে দেশের বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ। সরকার এ পরিকল্পনা সংশোধন না করলে – তা স্থানীয় এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) প্রভাব ফেলবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে স্থানীয় মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তাদের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ভ্যাট দিচ্ছে – শুধুমাত্র সংযোজনকারীরাই ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছে।

কিন্তু, যেসব কোম্পানির সারফেস মাউন্ট টেকনোলজি (এসএমটি) অ্যাসেম্বলি প্রক্রিয়ার সুবিধা রয়েছে সংযোজনসহ তাদের ভ্যাট হার ৫ শতাংশ, এই বছরের ১ জুন থেকে যা ৭.৫ শতাংশ হবে৷

এসএমএটির পাশাপাশি যেসব কোম্পানির পাওয়ার সার্কিট বোর্ড (পিসিবি) সংযোজন, ব্যাটারি চার্জার সংযোজন ব্যবস্থা রয়েছে- তাদের বর্তমান ভ্যাট হার ৩ শতাংশ, যা ৫ শতাংশ হবে।

এছাড়া যেসব কোম্পানির অতিরিক্ত পিসিবি সংযোজন এবং মোবাইল হাউজিং প্রস্তুত প্রক্রিয়া রয়েছে, তাদের ভ্যাট হার শূন্য থেকে ২ শতাংশ হবে।

প্রধান কিছু কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও ফোন প্রস্তুতকারকদের ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতে পারে, বর্তমানে যা ১ শতাংশ। কিছু কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান ১০ শতাংশ আমদানি শুল্কহার বেড়ে হতে পারে ১৫ শতাংশ।

শিল্পের অভ্যন্তরীণরা বলেছেন, দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ডের সংযোজনকারী এবং নির্মাতারা যখন ৫০ শতাংশ সক্ষমতায় কাজ করছে – তখন অবৈধ বাজারের আগ্রাসন, মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) বোঝা এবং চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ শিল্পে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত চাকরি ছাঁটাই হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার যদি করের বোঝা আরও বাড়ায়, তাহলে তারা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবেন, যা তাদের ব্যবসা থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারে।

২০২১-২২ অর্থবছরে স্মার্ট ও ফিচার ফোনসেট-সহ দেশে মুঠোফোন বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩.৫ কোটি। ভ্যাট ও শুল্ক বাড়লে চলতি বছর তা ২ কোটিতে নেমে আসার আশঙ্কার কথা জানান তারা।

স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটের ওপর বর্তমানে সার্বিক কর ১৮-২২ শতাংশ; আর আমদানিকৃত মুঠোফোনের ক্ষেত্রে তা ৫৭ শতাংশ।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- এর সহ-সভাপতি রেজওয়ানুল হক বলেন, "স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স আরোপ করা, গ্রে মার্কেটের সমস্যার সুরাহা না করা হলে মোবাইল প্রস্তুতকারক শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। ফলে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্বও কমবে।"

স্মার্ট ডিভাইস ও মোবাইল পরিষেবার শীর্ষস্থানীয় সরবরাহক প্রতিষ্ঠান ট্রানজিশন হোল্ডিংস বুধবার মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে তাদের একটি আইএসএমএআরটিইউ কারখানা উদ্বোধন করেছে বলে জানান রেজওয়ানুল হক। তিনি কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

তার মতে, সরকার স্থানীয় উৎপাদন ও সংযোজনে ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করলে, এ শিল্প চালু রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে।

সহমত পোষণ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান- পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের দিকটি জড়িত থাকায় হঠাৎ করেই স্থানীয় মুঠোফোন শিল্পের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো উচিত হবে না।

এছাড়া, অবৈধ আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে রাজস্ব বোর্ডের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, কারণ কারা একাজ করছে সেটা তাদের জানাই আছে। নাহলে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বর্তমানে ১৪টি দেশি ও বহুজাতিক লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মুঠোফোন উৎপাদন করছে।

২০১৮ সালে শুরুর পর থেকে মোবাইল প্রস্তুতকারক শিল্পে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১২ হাজার দক্ষ কর্মীর, যাদের অধিকাংশই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এর তথ্যমতে, দেশে আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন হ্যান্ডসেটের বার্ষিক চাহিদা মেটাতে এ শিল্পের পর্যাপ্ত সক্ষমতা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, দেশে প্রতিবছর ১৫,০০০ কোটি টাকার মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। এ খাতে বিনিয়োগ ৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি।

মার্কেট আওয়ার/তারিকুল

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর