ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

এমারেন্ড ওয়েল: লাগাম টানার কেউ নেই?

২০২৩ মে ২৪ ১৮:২৫:৩৪
এমারেন্ড ওয়েল: লাগাম টানার কেউ নেই?

উৎপাদন বন্ধ থাকার চার বছর পর মিনোরি বাংলাদেশে নামের একটি জাপানি ফার্মিং কোম্পানি যা মিনোরি কোম্পানি লিমিটেড এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান-এমারল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে কিনে নেয়।

২০২১ সালে মিনোরি বাংলাদেশ নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদন শুরু করার ঘোষণা দেয়। তারপর বার বার উৎপাদনের তারিখ পরিবর্তন করে। অবশেষে ২০২২ সালের ০৯ জানুয়ারি কোম্পানিটির আংশিক উৎপাদন শুরু করে। কিন্তু উৎপাদন শুরুর পর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদন বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের কোনো তথ্য দেয়নি।

এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন উৎপাদন শুরুর প্রাক্কালে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তেল উৎপাদনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তেল উৎপাদনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি থাকলেও গ্যাস সংকটের কারণে আগে তা সম্ভব হয়নি। যদিও প্রয়োজনীয় গ্যাস সংযোগ ছিল। কিন্তু টেকনিক্যাল কারণে পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও জানান, একটানা ২৪ ঘন্টা গ্যাসের প্রয়োজন হয়, তবে তা পাওয়া যায় না। মাত্র পাঁচ ঘন্টা গ্যাসের সরবরাহ রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহার করা হবে। এলপিজি গ্যাস সংযোগ সম্পন্ন হয়েছে। উৎপাদন পুরোদমে শুরু হবে।

কিন্তু পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরুর আগেই কোম্পানিটির দর হু হু করে বাড়ছে। লাগামহীন দর বৃদ্ধির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে শেয়ারটির নিয়ে কারসাজি করার জন্যই এতসব আয়োজন হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা এই কারসাজিতে ইন্ধন যোগাচ্ছেন। তা না হলে এভাবে লোকসানী একটি কোম্পানির শেয়ারদর এভাবে লাগামহীনভাবে বাড়তে পারে না।

কোম্পানিটির শেয়ার দর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২৫ এপ্রিল এর দর ছিল ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা। আজ বুধবার ২৪ মে এর দর উঠেছে ১০৭ টাকা ৮০ পয়সা। মাত্র ১৭ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৬০ টাকা ৩০ পয়সা বা ১২৭ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার যেন আকাশ ভেদ করতে চায়।

এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শেয়ারটির দর ছিল ২৮ টাকা ৫০ পয়সা। এখন প্রায় সাড়ে ৩ গুণ বেড়ে লেনদেন হচ্ছে প্রায় ১০৮ টাকায়।

এর আগে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারদরও মাত্র ৭৬ টাকা থেকে হাজার টাকায় উঠে। তখনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা উদাসীন ছিল। গণমাধ্যমে এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘুম ভাঙ্গেনি। এখন ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার ৩৭০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। যারা হাজার টাকায় শেয়ারটি কিনেছিল, তারা এখন দিশেহারা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমারেন্ড ওয়েলের শেয়ারেরও এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। যারা চড়া দরে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করবে, তাদেরকেও ওরিয়ন ইনফিউশনের বিনিয়োগকারীদের মতো দিশেহারা হতে হবে। কারণ কোম্পানিটি মুনাফায় ফিরতে কতো বছর লাগবে, তার কোনো ঠিক নেই। শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটির উৎপাদন চালু থাকবে কিনা, তাও নিয়ে অনেক বিনিয়োগকারী সন্দেহ পোষণ করছেন। কারণ উৎপাদন চালুর ১ বছর ৪ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেল, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির আর্থিক কোনো তথ্য জানে না।

কোম্পানিটি ২০১৬ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটি ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই বছরের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

ওই আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান রয়েছে ১ টাকা ৪১ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য রয়েছে নেগেটিভ ২০ টাকা ৫৭ পয়সা। অর্থাৎ কোম্পানিটির কোনো সম্পদ নেই। দেনা আছে ২০ টাকা ৫৭ পয়সা। শেয়ারবাজারে নেগেটিভ সম্পদের কোম্পানি খুবই বিরল। তারপরও কোম্পানিটির শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের প্রায় ১১ গুণ বেশি দরে লেনদেন হচ্ছে।

মার্কেট আওয়ার/হাবিব

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ প্রতিবেদন - এর সব খবর