ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

রমজানে পণ্য সংকট নিয়ে সতর্ক থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

২০২৩ মার্চ ১৬ ১৭:৪৪:১৫
রমজানে পণ্য সংকট নিয়ে সতর্ক থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেছেন, ‘খাদ্যে ভেজাল দেয়া, মজুতদারি বা কালোবাজারি এবং নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি এটা যেন কেউ করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে আমি সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। খবর বাসস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে রমজান মাস। এ সময় আমাদের কিছু ব্যবসায়ী জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারণ রমজান মাস কৃচ্ছ্রসাধনের সময় এবং মানুষ যাতে ভালোভাবে তাদের ধর্মকর্ম এবং রোজা যথাযথভাবে পালন করতে পারে সেদিকেই সবার দৃষ্টি দেয়া উচিত। সেসময় এসব মুনাফালোভীদের জিনিসের দাম বাড়ানো আর মানুষকে বিপদে ফেলার কোনো মানে হয় না।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইমামরা যখন মসজিদে জুমার নামাজের খুতবা দেন তখন কালোবাজারি বা মজুতদারি বা খাদ্যে ভেজাল দেয়া আর অযথা মানুষকে কষ্ট দেয়া যে গর্হিত কাজ, সে ব্যাপারে মানুষকে আপনাদের আরও বলা উচিত। খুতবাতেও এটা বলতে পারেন বা মানুষকে সচেতন করতে পারেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেভাবেই কাজ করতে আমি মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খাদেমদের অনুরোধ করব। তাহলে মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফা নেয়ার প্রবণতা নিশ্চয়ই কমে আসবে।’

নিম্ন আয়ের মানুষের ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার পারিবারিক কার্ডের ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অধিক দামে চাল ক্রয় করে ৩০ টাকা মূল্যে বিভিন্ন পরিবারকে দিচ্ছি। রমজানকে সামনে রেখে আরও ১ কোটি মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে আমরা চাল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি এবং একেবারে কর্মক্ষমতাহীনদের বিনা পয়সায় ৩০ কেজি করে চালও দিয়ে যাচ্ছি। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য সরকার ন্যায্যমূল্যে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ সরকার যাতে আরও ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারে সে জন্য সবার কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এ দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। তার সরকার গৃহহীন-ভূমিহীনকে বিনা মূল্যে ঘরবাড়ি এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কৃষিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। শ্রমিকদের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন এবং একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। বিদেশগামীদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকে বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণেরও ব্যবস্থা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তৃতীয় ধাপে এসব মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী তিনটি ধাপে সারা দেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ৫৬৪টি মসজিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫০টি মসজিদের উদ্বোধন করেছেন।

সরকারপ্রধান প্রথম দফায় ২০২১ সালের ১০ জুন ৫০টি মসজিদ এবং চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন।

অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হবে।

এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ ওজু ও নামাজের আলাদা জায়গা রয়েছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এতে ভার্চুয়ালি বরিশালের আগৈলঝাড়া, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণ সংযুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর নির্মিত ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছর ইসলামের খেদমতে বহু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৩ সালে ঢাকায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়েছে। আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় কোরআনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছে। বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ তিনটি ভাষায় পবিত্র কোরআন পড়া ও শোনার সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মসজিদগুলোকে ইসলামি জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে মসজিদ পাঠাগার স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় ২৮ হাজার মসজিদ পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘মসজিদ পাঠাগার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ২ হাজার ৫০০ নতুন পাঠাগার স্থাপন ও আড়াই হাজার পাঠাগারে পুস্তক সংরক্ষণের জন্য আলমারি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে জাতির পিতা ইসলামের নামে স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার ছিলেন উল্লেখ করে ইসলামের খেদমতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশে আয়োজন এবং এর জন্য জায়গা প্রদান, কাকরাইল মসজিদের জায়গা প্রদান, কম খরচে হজ পালনের জন্য হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় এবং রেডিও টিভিতে অধিবেশনের শুরু ও সমাপ্তিকে কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থাসহ বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবেন। কেননা শেষ বিচার তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেই করবেন। বিচারের ভার আল্লাহ মানুষকে দেননি। কেউ এই ধর্ম পালন করে না বলে তাকে খুন করে ফেলা ইসলামের শিক্ষা নয়। এটা আমি যেমন বিশ্বাস করি তেমনি যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেন এবং নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশ মানেন তারাও এতে বিশ্বাস করবেন। আর এই খুন-খারাবি করতে গিয়ে বিশ্বের কোনো কোনো জায়গায় আজকে ধর্মকেই অসম্মান করা হচ্ছে। দুর্নাম দেয়া হচ্ছে, সবচেয়ে শান্তির ধর্মের নামে কুৎসা দেয়া হচ্ছে কিছু লোকের জন্য। যেটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।

মামুন/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর