ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

১৩ বছরে হলো না ভাষা জাদুঘর

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ২১ ১১:০৬:৫১
১৩ বছরে হলো না ভাষা জাদুঘর

রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ভাষা জাদুঘর নির্মাণের বিষয়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালের দিকে তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব বলেছিলেন, আমরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছি, কিন্তু কোনো জবাব আসেনি। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।’ তিনি বলেন, ‘রায় ১৩ বছরেও বাস্তবায়ন হলো না। এর পেছনে কী রহস্য–কেউ বলতে পারে না। আমরা তিন দফায় আদালত অবমাননার মামলা করেছি। আমাদের সব সময় শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।’

মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পাঠানো মানে আমাদের হাইকোর্ট দেখানো। এখন কবে বাস্তবায়ন হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে রায় বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা লেগে থাকব। প্রয়োজনে নতুন যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসেছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। সর্বশেষ না হলে আবারও আদালত অবমাননার মামলায় যাব।’

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা এবং ভাষা জাদুঘর স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০০৯ সালে রিট করে। ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে শহীদ মিনারের পাশে গ্রন্থাগারসহ জাদুঘর প্রতিষ্ঠাসহ ৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলো হলো—

১. কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্ধারিত এলাকায় সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করে ওই এলাকায় কোনো ভবঘুরে যাতে ঘোরাফেরা করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। অসামাজিক কার্যকলাপ যাতে চলতে না পারে, সে জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

২. মূল বেদিতে কোনো ধরনের মিটিং, মিছিল, পদচারণা, আমরণ অনশন করা থেকে বিরত রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং ভাষাসৈনিকসহ জাতীয় ব্যক্তিত্বদের মরদেহে সর্বস্তরের জনগণের সম্মান প্রদর্শনের জন্য শহীদ মিনারের মূল বেদি ব্যবহার বা বিশেষ দিনে ফুল দিতে কোনো বাধা থাকবে না। মূল বেদির পাদদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাতেও কোনো নিষেধ থাকবে না। শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় কমপক্ষে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেবে পূর্ত মন্ত্রণালয়। ঢাকা সিটি করপোরেশন তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেবে।

৩. ভাষা আন্দোলনের শহীদদের সবাইকে মরণোত্তর এবং জীবিতদের জাতীয় পদক দেওয়ার ব্যবস্থা নেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

৪. ভাষাসৈনিকদের মধ্যে জীবিত কেউ যদি সরকারের কাছে আবেদন করেন, তা হলে তাদের যথাযথ আর্থিক সাহায্য এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ভাষাসৈনিকদের প্রকৃত তালিকা তৈরির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি এবং জেলায় জেলায় ডিসিদের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করবেন। তালিকা যাচাইবাছাই করে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।

৬. কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে লাইব্রেরিসহ ভাষা জাদুঘর নির্মাণ করতে হবে। সেখানে সার্বক্ষণিক গাইড থাকবে। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত তথ্যাবলি) সন্নিবেশিত করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ব্রুশিয়ার তৈরি করে জাদুঘরে রাখতে হবে, যাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারেন। পূর্ত মন্ত্রণালয়কে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে।

৭. জীবিত ভাষাসৈনিকদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করতে হবে এবং সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

৮. বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও সংরক্ষণ করতে হবে।

নির্দেশনাগুলোর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, সপ্তম ও অষ্টম দফা নির্দেশনার অংশবিশেষ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় তৎকালীন সংস্কৃতি ও পূর্ত সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করে এইচআরপিবি। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি তারা আদালতে হাজির হয়ে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন। তখন আদালত তাদের ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রায় বাস্তবায়নে নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপরও রায়ের পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।

এ অবস্থায় ২০১৭ সালে রিটকারীপক্ষ হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন। এরপর হাইকোর্ট রায় বাস্তবায়নে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে—তা জানতে চান। এতে বিবাদীপক্ষ ভাষা জাদুঘর তৈরির জন্য ‘মহাপরিকল্পনার’ কথা জানিয়ে প্রতিবেদন দেয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে তৃতীয় দফা আদালত অবমাননার মামলা হয়। এরপর আর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

মামুন/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর