ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ছয় মাসে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ৫২৭ কোটি ডলার

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০৬ ০৯:৩০:৩২
ছয় মাসে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ৫২৭ কোটি ডলার

২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৬৯ কোটি ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণের প্রথম কিস্তি হিসাবে ৪৭৬ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

জানা গেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাধারণত আমদানিনির্ভর অর্থনীতি হওয়ায় চলতি হিসাব-ভারসাম্যে সবসময়ই ঘাটতি থাকে। কারণ, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে আমাদের আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হারে করতে হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজাবউল হক কালবেলাকে বলেন, এলসি খোলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী নিয়ন্ত্রণের ফলেই চলতি হিসাবের ঘাটতি কিছুটা কমেছে। এর ফলে দেশের রিজার্ভের চাপও কিছুটা কমবে।

তিনি বলেন, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি থাকার মানে হচ্ছে দেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হচ্ছে। এর আগে, মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে আসার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎপরতায় চলতি হিসাবের ঘাটতি অনেকখানি কমে এসেছে। আগামীতে তা আরও কিছুটা কমবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

চলতি হিসাবের পাশাপাশি পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণও কমেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৩৪০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৮১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৮৯৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে পণ্য আমদানি কমেছে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। আমদানি ব্যয় কিছুটা কমলেও যে হারে পণ্য আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে, সেই হারে রপ্তানিতে আয় বাড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ২ হাজার ৫৮৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ৩২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি সেবা খাতেও ঘাটতি বেড়েছে। এ সময় সেবা খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে ঘাটতি বেড়েছে ২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার পাশাপাশি কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭০৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে চার মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

আমদানি-রপ্তানিতে সৃষ্ট বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখে প্রবাসীদের পাঠানো বিদেশি মুদ্রা। ডিসেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আর অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ১৯৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৫০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৮৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৭ টাকা, আর খোলা বাজারে তা ১১৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

রিজার্ভের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে আনতে গত এপ্রিল থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে ৩০ লাখ ডলারের সম পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। আর সরকারি পর্যায়ে অপেক্ষাকৃম কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সাময়িক স্থগিত রাখাসহ অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি হিসাবের ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিতে। গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাণিজ্য ঘাটতি ও ডলার বিক্রি করায় কমে আসছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। সবশেষ ১ ফেব্রুয়ারি দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, দেশের প্রকৃত রিজার্ভ হবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

এএসএম/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর