ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে ২০৭ শতাংশ

২০২২ নভেম্বর ১১ ০৮:২১:৩৯
খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে ২০৭ শতাংশ

খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে ২০৭ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (কেপিপিএল)। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি গ্রাহকদের লভ্যাংশ দিতে একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে। যে কয়েক বছর লভ্যাংশ দিয়েছে তার পরিমাণ অল্প ছিল। তবে চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে, যা গতকাল সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

অস্বাভাবিক শেয়ারদরে ভর করে গত ২৭ দিনে কোম্পানিটির ৯ টাকা ৮০ পয়সার শেয়ার ৩০ টাকা ১০ পয়সায় পৌঁছেছে। বেড়েছে ২০ টাকা ৩০ পয়সা বা ২০৭ শতাংশ। শেয়ারদর ও লেনদেনে এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েও জবাব পায়নি ডিএসই।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৯ অক্টোবর কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৯ টাকা ৮০ পয়সা। এর পর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী। সর্বশেষ গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ১০ পয়সায়। এদিন সর্বোচ্চ ৩১ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়। এ হিসাবে গত ২৭ দিনে ৯ টাকা ৮০ পয়সার শেয়ার ৩০ টাকা ১০ পয়সায় পৌঁছায়। বেড়েছে ২০ টাকা ৩০ পয়সা বা ২০৭ শতাংশ। এ সময়ে এক দিনে সর্বোচ্চ লেনদেন হয় এক কোটি চার লাখ আট হাজার ৯৪১ টাকা।

অস্বাভাবিক শেয়ারদর ও লেনদেন বৃদ্ধির কারণ জানতে কেপিপিএলকে গত মাসে দুবার চিঠি দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু কোনো জবাব পায়নি ডিএসই। এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ ও ২২ নভেম্বর কোম্পানি বরাবর অস্বাভাবিক শেয়ারদর ও লেনদেন বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানিটি কোনো জবাব দেয়নি।

কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বাজার এক ধরনের স্থবিরতার মধ্যে রয়েছে। আগে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের শেয়ার কিনে লোকসানে পড়েছেন। এমন অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ। আর নতুন বিনিয়োগকারীরাও বাজারবিমুখ হচ্ছেন।

এর আগে চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ও লেনদেনে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা যায়। তখন কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ারদর ১৫ টাকা ২০ পয়সা এবং লেনদেন ৬০ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯৪ টাকায় পৌঁছেছিল। ওই সময়ও ডিএসইর থেকে অস্বাভাবিক শেয়ারদর ও লেনদেন বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো জবাব দেয়নি কোম্পানিটি।

কাগজ ও মুদ্রণ খাতের কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পুঁঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেও বাকি বছরগুলোয় পাঁচ শতাংশের বেশি দিতে পারেনি। এর মধ্যে কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পাঁচ শতাংশ, ২০১৯ সালে এক শতাংশ আর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয় ২০২০ সালে। অন্য বছরগুলোয় লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয় কেপিপিএল।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা, আগের হিসাববছরে যা ছিল ২ টাকা ৯৯ পয়সা। আর সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ছয় পয়সা, আগের হিসাববছরের একই সময়ে যা ছিল এক টাকা ৯৬ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে এক টাকা ৯৮ পয়সায়।

২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে আয় আগের বছরের তুলনায় বাড়লেও কোম্পানিটির পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে আট কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের এক শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ১০৮ কোটি ছয় লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটি পরিচালন মুনাফায় ফিরলেও বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান গুনতে হয়েছে দুই কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে তারা শেয়ারহোল্ডাদের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৫২ কোটি সাত লাখ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল ৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে শেয়ারেহাল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।

সর্বশেষ ২০২১-২২ হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় আরও কমার পাশাপাশি নিট লোকসানও কমেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির আয় হয়েছে মাত্র ১৪ লাখ টাকা। পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। লোকসানে থাকায় সর্বশেষ হিসাববছরেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি কোম্পানিটি।

খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের উৎপাদন ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে বন্ধ রয়েছে। এর মালিক এসএম আমজাদ হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলায় বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দুদক আমজাদ হোসেন ও তার পরিবারের এবং কোম্পানির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। এমন অনিশ্চিত যাত্রায় থাকা লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর লাফিয়ে বাড়ছে।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি টাকা। মোট শেয়ার সাত কোটি ৩০ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর দরবৃদ্ধিতেও তাদের যোগসাজশ থাকতে পারে।

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

বিনোদন এর সর্বশেষ খবর

বিনোদন - এর সব খবর