ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও বিরোধ মেটেনি জাপার

২০২২ ডিসেম্বর ৩১ ১১:২০:৫০
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও বিরোধ মেটেনি জাপার

তবে বছরের শেষ প্রান্তে সুখবর মিলেছে দলটিতে। ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দলটির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

এর আগে চলতি বছরের আগস্ট থেকে মূলত জাপায় গৃহবিবাদ শুরু হয়, যা একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ছাপিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত গড়ায়। আকস্মিকভাবেই ২৬ নভেম্বর দলের কাউন্সিলের ডাক দেন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদ। এ নিয়ে দলে তীব্র জটিলতার সৃষ্টি হয়। রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে বাদ দিতে স্পিকারের কাছে চিঠি দেন জি এম কাদের। পরে সরকারের মধ্যস্থতায় রওশন সম্মেলন স্থগিত করলেও মূল সমস্যা থেকেই যায়।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সরকার পক্ষে সমঝোতায় আপাতত জাতীয় পার্টি ভাঙন থেকে রক্ষা পেলেও যেসব বিষয় নিয়ে মূলত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি; তা যে তিমিরে ছিল, সেখানেই আছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে ডেকে রওশন, জি এম কাদের ও সাদ এরশাদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে সরকার প্রধানের কথায় পরিস্থিতি বদলায়নি। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুরোধে একসঙ্গে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে রওশন এরশাদের অনুসারিরা বলছেন, দলে জায়গা না পাওয়া নেতাদের ফিরিয়ে নেওয়া, বহিষ্কৃত নেতাদের আদেশ প্রত্যাহার, রওশনের পরামর্শ নিয়ে দল পরিচালনা, সরকারের সঙ্গে থাকা ও সাদ এরশাদকে পার্টির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানো—এই পাঁচ দফা নিয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে কোনো মীমাংসা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারও মধ্যস্থতা বৈঠক করার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩ সালের মার্চের পর জাপার সংকট মিটতে পারে। তখন জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আবারও সরকার মহাজোটের ঘোষণা দিতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ইতোমধ্যে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই দ্রুত কাউন্সিল জরুরি। বিভেদের কারণে পার্টির অনেক জেলা-উপজেলায় সম্মেলনের তারিখ হলেও তা আটকে আছে। তিনি চান একসঙ্গে মিলেমিশে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে রওশনের অনেক দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন করতে। এতে দল আরও শক্তিশালী হবে। তেমনি শক্তিশালী বিরোধী দল গঠনের পক্ষে জি এম কাদের। প্রয়োজনে তিনি বিএনপির সঙ্গে জোটে যেতে রাজি। যদিও এতে ঘোর আপত্তি রওশন এরশাদের।

এরইমধ্যে শীর্ষ নেতৃত্বে বিভক্তির মধ্যেই পালিত হচ্ছে যাচ্ছে জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। কোন্দলের কারণে এ বছর তেমন আয়োজন নেই। আগামী ১ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যৌথভাবে সমাবেশের করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। কর্মসূচিতে দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদেরের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। তবে আইনি জটিলতার কারণে তিনি না যেতে পারলে সভাপতিত্ব করবেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। অন্যান্যবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হলেও এবার সারা দেশে জাঁকজমক কোনো আয়োজন থাকছে না। গত শুক্রবার রওশন ও জি এম কাদেরপন্থি শীর্ষ অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

দলটির নেতারা জানান, ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে জি এম কাদেরের উপস্থিত থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, তার বিরুদ্ধে দলীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে আদালতের আদেশ রয়েছে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তিনি দলীয় কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে উপস্থিত হয়ে নীরবে বসে থাকা যায় কিনা, এ ব্যাপারে কাদের আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন বলে জানা গেছে। তেমনি দলের যেসব নেতা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাদের সঙ্গে আপসেরও চেষ্টা চালাচ্ছেন একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, দলটির বেশিরভাগ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও কাউন্সিল হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের ৭৬টি সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে ৫০টির বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৩৫টির বেশি চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নামে জেলা-উপজেলা কমিটি চলছে বছরের পর বছর। তিন বছরের জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। খোদ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটিও চলছে রীতিমতো খুঁড়িয়ে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ইস্যুতে বিরোধী দলের কর্মসূচি না থাকা এবং কমিটি গঠন না হওয়ায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনসমর্থন হারানোর প্রধান কারণ বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

সূত্রগুলো বলছে, দলের ২৯৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে বছরের পর বছর বৈঠক হয় না। প্রেসিডিয়াম সদস্য ৪১, ভাইস চেয়ারম্যান ৪১ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন ৩১ জন। গুরুত্বপূর্ণ এই কেন্দ্রীয় নেতার অনেকেই একে অন্যকে চেনেন না। পার্টির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তে পদ দেওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, কেন্দ্রসহ অধিকাংশ জেলায় জাপার কমিটিতে নেতায় নেতায় রয়েছে দ্বন্দ্ব। কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, জাপার ঢাকা বিভাগের ১৭টি কমিটির মধ্যে ১০টি চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে, ৭টি চলছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির মাধ্যমে।

উল্লেখ্য, সেনাপ্রধান হিসেবে ক্ষমতা দখল করে এরশাদ তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করেন। গণঅভ্যুত্থানে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা হারানোর পর ওই দশকেই দলে প্রথম ভাঙন ধরে। বর্তমানে জাপার সংসদ সদস্য ২৬ জন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাপার আসন ছিল ৩২টি, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৭, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩৪টি আসন পায় দলটি।

মোর্শেদ/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর