ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

রংপুর সিটি নির্বাচনে আ.লীগের ভরাডুবির তিন কারণ

২০২২ ডিসেম্বর ২৮ ২৩:১১:০১
রংপুর সিটি নির্বাচনে আ.লীগের ভরাডুবির তিন কারণ

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফার কাছে প্রায় সাত গুণ কম ভোট পেয়ে নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ভরাডুবির এই প্রার্থী। কারণ এর আগে রংপুরে দলীয় প্রতীকে কেউ জামানত হারায়নি।

অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার নজিরবিহীন এই ভরাডুবি দলটির জন্য লজ্জার। যে কারণে দলটির নেতা-কর্মীরা এই হারকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, জাপা প্রার্থী মোস্তফা পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট। আর ডালিয়া পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট। এই বড় ব্যবধান আর নির্দিষ্ট অঙ্কের ভোট না পাবার কারণে জামানত হারাতে হয়েছে তাকে।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য, আলোচনায় থাকা নেতাদের মনোনয়ন না দেওয়া, তৃণমূল কর্মীরে সঙ্গে ডালিয়ার সমন্বয়নহীনতা আর দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই বিপর্যয়ের মূল কারণ।

কী বলছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা

স্থানীয় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতা জোর প্রচার চালিয়েছেন। এমনকী তাদের দুই-তিনজন প্রার্থী নির্বাচনী সব প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ওই নেতাদের কেউই দলের টিকেট পাননি। আলোচনায় না থাকা হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে দেওয়া দলের মনোনয়ন ও দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন তারা। মনোনয়ন না পাওয়া মনোক্ষুণ্ন নেতারা ডালিয়ার সঙ্গে কাজও করেছিলেন। কিন্তু কাজ করা নেতারা ধারণাও করেননি এত কম ভোট পাবেন সাবেক এই সংরক্ষিত আসনের এমপি।

একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, দলীয় মনোনয়ন যেভাবেই হোক পেয়েছেন। কিন্তু তিনি দলের শীর্ষ নেতাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী কাজের সমন্বয় করেননি। এমনকি ৩৩টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ ওয়ার্ডে ছিল না নির্বাচনী অফিস। ওয়ার্ডে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ছিল নাম মাত্র। পরিচিত জায়গা আর পরিচিত নেতাকর্মী ছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তেমন প্রচার ছিল না তার। ছিল না পর্যাপ্ত পোস্টার-ফেস্টুনও। ভোটের মাঠে তার পরিচিতিও ছিল কম।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। এর আগে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ছিলেন।

মনোনয়ন পাওয়ার আগে ডালিয়া মেয়র পদে নির্বাচন করবেন এমন প্রচার দৃশ্যমান ছিল না। এমনকী দলের প্রথম সারির অনেক নেতাও জানতেন না ডালিয়া মেয়র পদে নির্বাচন করবেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর মাত্র ১৭ দিনে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে গিয়ে প্রচার চালানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। শেষ সময়ে তিনি ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন।

অভিযোগ আছে সংরক্ষিত আসনের এমপি থাকার সময় তিনি ঢাকায় বেশি অবস্থান করতেন। সার্বক্ষণিক ডালিয়ার হয়ে কাজ করা নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আমি এত বিস্মিত হয়েছি, ফলাফলটা অত সহজভাবে গ্রহণ করতে পারছি না। এর ভাবনাটাও সহজভাবে ভাবতে পারছি না।’

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি বলেন, ‘আমরা দিনরাত মাঠে কাজ করেছি। শুধু দলীয় মার্কা হলে হবে না, প্রার্থীর ওপর ভোট নির্ভর করে। মার্কা অবশ্যই লাগবে, মার্কার সঙ্গে ব্যক্তির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, তার আচার-আচরণ, মানুষের সঙ্গে তার অতীত কর্মকাণ্ড, কী কাজ করছে না করছে এগুলো মানুষ মূল্যয়ন করে। এত কাজ করার পরেও কেন তিনি কম ভোট পেলেন, তা বুঝতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে কখনো দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হয়ে জামানত হারাননি। তবে, হয় একবার জিতেছে না হয় অন্যবার হেরেছে। কিন্তু জামানত হারাননি।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল দলীয় কোন্দল ও সমন্বয়ে সমস্যার কথা অস্বীকার করেন।

সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘ওদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। তৃণমূল পর্যন্ত ঠিকমতো প্রচারে থাকাসহ হ্যাভিওয়েট প্রার্থী ছিল না। এ কারণেই ভোটে মানুষ খুব একটা মূল্যায়ন করেনি। একই সঙ্গে এ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের কোনো ইস্যু বা পরিকল্পনা ছিল কিনা তাও ভাবতে হবে।’

এএসএম/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর