ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে ব্রোকারেজ হাউস

২০২২ ডিসেম্বর ২৪ ১৪:৫৩:৩৫
কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে ব্রোকারেজ হাউস

গত জুলাই মাসে শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দর কমার সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর প্রাইস) বেঁধে দেয়। এরপর থেকে লেনদেনে অংশগ্রহণ করা সিংহভাগ কোম্পানি পর্যায়ক্রমে ফ্লোরে আটকা পড়ে।

গত ৬ ডিসেম্বর এক পর্যায়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩০৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশগ্রহণ করে, যার ২২৮টি কোম্পানির শেয়ারে কোনো ক্রেতা ছিল না। ওইদিন বছরের সর্বনিম্ন ২৭১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার লেনদেনের রেকর্ড হয়েছিল।

গত নভেম্বর মাসে কয়েকদিন হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও ডিসেম্বর মাসে হাজার কোটি অতিক্রম করতে পারেনি ডিএসই। এতে ব্রোকারেজ হাউসের ডিএসইর উদ্যোক্তা-পরিচালক ও বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচার ফি থেকে আয় কমতে থাকে। ফলে অফিস খরচ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এ কারণে অনেকেই কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অন্যদিকে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ধারাবাহিক পতনে থাকা শেয়ারবাজারে লেনদেনের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমেছে। এতে লোকসানে পড়ে কর্মচারী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে অনেক ব্রোকারেজ হাউস।

অন্যদিকে ব্রোকারেজ হাউস থেকে বিনিয়োগকারীদের (বিও) টাকা তুলতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুরতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউসের সংখ্যা ৩০৪টি। এর মধ্যে কার্যক্রমে আছে ২৩৪টি। গেল অক্টোবর মাসে ডিএসইর উদ্যোক্তা-পরিচালক ও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনাবেচা করেছে ২১ হাজার ৯১ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৬৯ টাকার। এসব লেনদেন থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৮১৪ টাকা। যা গত বছর একই সময়ের তুলনায় ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার ৯২৭ টাকা কম। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৪০ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ৭৪১ টাকা।

গত নভেম্বর মাসে ডিএসই থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৪ টাকা। ফলে অক্টোবর মাসের থেকে নভেম্বর মাসে রাজস্ব আয় কমেছে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫০ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছিল ৩৫ হাজার ৪৮০ কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ১১৯ টাকা। সেখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ৪০ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭২ টাকা। এর আগের মাস আগস্টে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩২ কোটি ৮৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৯ টাকা।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এই বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান, দেশের সার্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এবং ফ্লোর প্রাইসের কবলে পড়ে টালমাটাল দেশের পুঁজিবাজার। লেনদেন কম হওয়ার সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে উপার্জন না থাকায় কর্মচারীর বেতন-ভাতা দিতে পারছে না ব্রোকারেজ মালিকরা। লেনদেনের পরিমাণ না বাড়লে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা পথে বসবে এবং বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

জানতে চাইলে ডিএসই সাবেক পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বর্তমান বাজারে লেনদেন দীর্ঘদিন থেকে হাজার কোটির নিচে। এর মানে ব্রেকারেজের আয়ের প্রধান উৎস শেয়ার কেনাবেচা থেকে যে আয় হচ্ছে, তাতে প্রতিষ্ঠান তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ও মেটাতে পারছে না। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এ পরিস্থিতি ব্যাপক আকারে ধারণ করেছে। এতে ছোট-বড় সব ব্রোকারেজ হাউসই সমস্যায় পড়ছে। অনেকে ব্যয় কমাতে কর্মচারী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এক কথায় লেনদেনের মন্দার কারণে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।’

হাবিব/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর