ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

ভেঙে গেল বিএনপির রাজনৈতিক সঙ্গী ২০ দলীয় জোট

২০২২ ডিসেম্বর ২১ ১৭:৪৭:৩৮
ভেঙে গেল বিএনপির রাজনৈতিক সঙ্গী ২০ দলীয় জোট

এই জোটের অভ্যন্তরীণ দলগুলোর মধ্যেও কাদা ছোড়াছুটি লক্ষ্য করা গেছে। একাধিক দল বেরিয়ে গেছে। বেরিয়ে যাওয়া দলগুলোর একটি অংশ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে জোটের সংখ্যা টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

এছাড়া জোটের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে বেশ কয়েকটি দলের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির প্রধান শরিক জামায়াতের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক আগের মতো নেই। টানাপোড়েন লক্ষ্য করা গেছে। এমতাবস্থায় ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কার্যত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোটের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে শরিকদের এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানাবে না।

ওই বৈঠকে শরিকদের ‘জোট’ গঠন করে কিংবা ‘একক’-যেভাবেই হোক যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জোটে থাকা ১১ রাজনৈতিক দল নতুন করে একটি ‘ফ্রন্ট’ গঠন করছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’ নামে এই ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। এছাড়া ৬টি দলও আলাদা জোট গঠনের চেষ্টা করছে। তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি এককভাবে কর্মসূচি পালন করবে।

সাংবাদিকেদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘২০ দল জোট হিসাবে নেই। বিএনপি ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আশা করছি জোটে থাকা শরিকরা যুগপৎ আন্দোলনে থাকবেন।’

২০ দলীয় জোটে থাকা অন্তত ১৪টি শরিক দলের শীর্ষ নেতারাও জোট ভেঙে দেওয়ার কথা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। তারা জানান, ৯ ডিসেম্বরের বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব নেই। তাই এই জোটকে ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। বিএনপি নেতারা শরিকদের কাছে বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কৌশলগত কারণে ভেঙে দেওয়া হলো জানিয়ে জোটের শরিকদের উদ্দেশ করে বিএনপি নেতারা এও বলেছেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জোটকে ভাঙছি তা প্রচার করব না। কিন্তু আমরা যুগপৎ করছি। আপনারা যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলন করবেন। যদি মনে করেন যে, আপনাদের নিজেদের মধ্যেও সখ্য বা একটা বোঝাপড়া আছে, তারা মিলে কিছু করবেন সেটাও করতে পারবেন। যে যেভাবে পারেন বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি সমর্থন করে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবেন।’

উল্লেখ্য, চারদলীয় জোটের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দল এবং পরে পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি দল নিয়ে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়। ডানপন্থি ও মধ্য-ডানপন্থি দলগুলোর সমন্বয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী এ জোট গড়ে উঠেছিল।

সূত্র থেকে জানা যায়, ২০ দলীয় জোটে থাকা ১১ রাজনৈতিক দল এখন একটি ফ্রন্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। প্রাথমিকভাবে ‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’ ও ‘সমমনা ১১ দল’- এ দুটি নাম ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট নাম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ জোট যৌথ নেতৃত্বে চলবে এবং একজন সমন্বয়ক থাকবেন। ১১ দল হলো-মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এলডিপি, অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, কমরেড নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ও অ্যাডভোকেট আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।

এবিষয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনে আমাদের সবার অবদান থাকবে। কিন্তু সেটাকে আরও সুসঙ্গতভাবে করার জন্য একতাবদ্ধ হতে চাচ্ছি। মৌলিক লক্ষ্য হচ্ছে যুগপৎ আন্দোলন, সরকার পতনের আন্দোলন।’

মোর্শেদ/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর