ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে দোটানায় বিএনপি

২০২২ ডিসেম্বর ২১ ০৭:১৮:৪২
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে দোটানায় বিএনপি

এদিকে দলের মহাসচিব বিভিন্ন দলীয় কমিটির অনুমোদন, যৌথ সভা আহবান, দলীয় আর্থিক লেনদেন, চেক বইয়ে স্বাক্ষরসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাচিবিক কাজ করেন। কিন্তু মহাসচিব কারাগারে থাকায় দলটি ব্যাংকিং লেনদেন করতে পারছে না। চলমান এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব কে পাবেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা।

যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর প্রচার হয়েছে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এটা সত্য নয়। কেননা, এ মুহূর্তে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে দলের হাইকমান্ডে কোনো আলোচনা নেই। দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির জন্যই এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

কিন্তু দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব নিয়ে গুঞ্জন ও অপপ্রচারের ডালপালা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ফলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কে হবেন—এ নিয়ে তারা নানা অঙ্ক কষছেন। দলের যে কোনো বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে তারা জানান। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে ভাবছি না।

গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক উত্তেজনা ও আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মকবুল নামে দলটির এক কর্মী নিহত হন। সেদিনই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরদিন ৮ ডিসেম্বর ভোরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সংকটকালে মির্জা ফখরুলের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কে হবেন—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে বিএনপির গঠনতন্ত্রে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। সেজন্য বিএনপির হাইকমান্ড এ নিয়ে ভাবছে না। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৭ (খ) (১) উপধারায় বলা আছে—দলের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে চেয়ারম্যান দলের সর্বময় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ, তদারক ও সমন্বয় সাধন করবেন এবং তদুদ্দেশ্যে জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, বিষয় কমিটিসমূহ এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য কমিটিসমূহের ওপর কর্তৃত্ব করবেন এবং তাদের কার্যাবলীর নিয়ন্ত্রণ, তদারক ও সমন্বয় করবেন।’ গঠনতন্ত্রের ১৭ (খ) (৩) উপধারায় বলা আছে—‘জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে উক্ত কমিটির কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব, ক্ষমতা ও কর্তব্য নিরূপণ করবেন।’ এ ছাড়া গঠনতন্ত্রের ১০ নং ধারায় উল্লেখ আছে—‘যে ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান নেই, জাতীয় স্থায়ী কমিটি সে ক্ষেত্রে বিধি ও উপবিধি প্রণয়ন করতে পারবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, দলের মহাসচিব পদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মহাসচিব পদের জন্য অনেকেই ভাবেন। কারও মতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পেতে পারেন।

আবার কেউ বলছেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ আলোচনায় আছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে দলে কোনো আলোচনা নেই। আমাদের নেতা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে সংগঠন পরিচালনা করছেন। দেখা যাক, মহাসচিব কতদিন কারাগারে থাকেন। আমরা আশাবাদী, সরকার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ গ্রেপ্তারকৃত সব নেতাকর্মীর মুক্তি দিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে।

জানা গেছে, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপিতে সাতজন মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন—প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (১৯৭৮-৮৫), দ্বিতীয় মহাসচিব কর্নেল (অব.) আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (১৯৮৫-৮৬), তৃতীয় মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমান (১৯৮৬-৮৮), চতুর্থ মহাসচিব ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার (১৯৮৮-৯৬ সালের ২৫ জুন), পঞ্চম মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া (১৯৯৬ সালের ২৬ জুন থেকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর), ষষ্ঠ মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন (২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৬ মার্চ), সপ্তম ও বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (২০১১ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত এবং ৩০ মার্চ ২০১৬ থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত)। এখন দলটির অষ্টম মহাসচিবের দায়িত্ব কে পাবেন, সেটাই দেখার বিষয়।

এর আগে ২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন লন্ডনে থাকা তারেক রহমান। এ অবস্থায় মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুলই অন্যতম শীর্ষ কাণ্ডারি। গত প্রায় ১৫ বছরে তিনিও একাধিকবার জেলে গেছেন।

তবে দীর্ঘমেয়াদে কারাবাসের সম্ভাবনা থাকলে দলের চেয়ারম্যান নির্বাহী আদেশে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। এর আগে মির্জা ফখরুল কয়েক মাস কারাগারে থাকলে বা বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেলেও কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সে সময় অনেকেই ভেবেছিলেন এবং প্রচার করেছিলেন, সার্বক্ষণিক রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হচ্ছেন; কিন্তু তাকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বর্তমানে তিনিও কারাগারে।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব প্রসঙ্গে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এখানে দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু মহাসচিব গ্রেপ্তার, সব নেতাকর্মী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। তারেক রহমান বলেছেন, নেতারা গ্রেপ্তার হলে শেষ কর্মী পর্যন্ত দায়িত্ব নেবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দলের মহাসচিব আমাদের অভিভাবক। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই দেখভাল করছেন। এটা তার জন্য বাড়তি চাপ। তা ছাড়া মহাসচিব না থাকায় তারা ব্যাংকিং লেনদেন করতে পারছেন না বলে জানান প্রিন্স।

রহমান/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর