ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

এপেক্স উইভিংয়ের কারখানা বন্ধ, জানে না বিনিয়োগকারীরা

২০২২ ডিসেম্বর ২১ ০৬:৫৯:৩৬
এপেক্স উইভিংয়ের কারখানা বন্ধ, জানে না বিনিয়োগকারীরা

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মূল্যসংবেদনশীল তথ্যটি কোম্পানিটি স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানায়নি। ফলে জানে না কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা। ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির নিরীক্ষকএ তথ্য জানিয়েছেন।

সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে এপেক্স উইভিং কোনো আয় দেখায়নি এবং এ সময়ে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কোনো কিছু কেনাও হয়নি। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে জানায় যে এ সময়ে উৎপাদন চালু ছিল না এবং আগের বছরের মজুদ পণ্য এ বছর দেখানো হয়েছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর বিপরীতে বিলও খুঁজে পেয়েছেন। এ বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের সম্পর্কিত পক্ষ এ সময়ে কারখানা ব্যবহার করেছে, যদিও এ-সংক্রান্ত কোনো চুক্তি দেখাতে পারেনি কোম্পানি।

গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হলেও কেন কারখানায় কোনো উৎপাদন, বিক্রি ও কেনাকাটা হয়নি সেজন্য কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এমনকি আর্থিক প্রতিবেদনে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ যে পরিমাণ অর্থ দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে তিতাস গ্যাস ও ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলের তথ্যের মিল নেই।

কারখানা বন্ধ থাকলেও গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল সম্পর্কে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এমনকি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে কারখানার বর্তমান অবস্থা ও মজুদের বিষয়টি যাচাই করার জন্য কারখানা পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি। ফলে এ বিষয়গুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেননি নিরীক্ষক। আলোচ্য অর্থবছরে কারখানা বন্ধ থাকা ও বিক্রি না হওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি।

এছাড়া প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাবে সম্পর্কিত পক্ষের মধ্যে সংঘটিত লেনদেন, ব্যাংক বিবরণী, পাওনা বিল, পাওনাদারদের তথ্য, সম্পদের যথার্থতা, মজুদ পণ্য, আয়কর, আমদানি পত্রের দায়ের মতো বিষয়গুলো যাচাই করতে পারেননি নিরীক্ষক।

আর্থিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষক আরো জানিয়েছেন, কোম্পানিটি ২০০৯ সাল থেকেই লোকসানের মধ্যে রয়েছে এবং এ বছরের জুন শেষে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫১ কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি ভেঙে যাওয়ার কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানির ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে এবং ব্যাংকের কাছ থেকেও চলতি মূলধন সহায়তা পাচ্ছে না।

পাশাপাশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার মতো বিষয়গুলো ভবিষ্যতে কোম্পানিটির টিকে থাকার বিষয়ে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন নিরীক্ষক। সামান্য কিছু নথিপত্র নিরীক্ষককে দেয়া হয়েছে এবং তথ্যের ঘাটতির কারণে এসব নথিপত্রের যথার্থতাও যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে যথাযথ ও পর্যাপ্ত তথ্য ও ব্যাখ্যার অভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম এবং প্রস্তুত করা আর্থিক বিবরণীর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং তথ্যগত নির্ভুলতার বিষয়ে নিরীক্ষক কোনো উপসংহারে আসতে পারেননি।

এদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এ বছর বেশ কয়েকবার এপেক্স উইভিংয়ের শেয়ারদর কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে দেখা গেছে। ১৯৯৫ সালে শেয়ারবাজারে এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় এপেক্স ওয়েভিং। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ২৬ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত ডিভিডেন্ড না দেয়ায় ২০০৯ সালে ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তরিত হয়।

এরপর দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে উন্নতি হয়নি। গত বছর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কোম্পানিটিকে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের স্বল্প মূলধনি বা এসএমই বোর্ডে লেনদেনের অনুমোদন দেয়।

এএসএম/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ প্রতিবেদন - এর সব খবর