ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

যে কারণে কমছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত

২০২২ ডিসেম্বর ২০ ১০:৪৭:৪৮
যে কারণে কমছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত

এর আগে ব্যাংকের চেয়ে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখলে বেশি সুদ পাওয়া যেত। এখন অনেক ব্যাংকই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আমানতে বেশি সুদ দিচ্ছে। এতে পুরো খাতে এর প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৫৮৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যা এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ছিল ৪২ হাজার ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ৫০০ কোটি ৯২ লাখ বা ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে আমানত কমেছে ১ হাজার ২০৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বা ২.৮১ শতাংশ।

এদিকে, বাংলাদেশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের আমানতে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের সর্বোচ্চ কোনো সীমা নেই, বরং সর্বনি¤œ সীমা রয়েছে। একই বাজারে কারও জন্য সর্বোচ্চ সীমা, আবার কারও জন্য সর্বনিম্ন সীমা থাকাতেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।

গত জুলাই থেকে এনবিএফআইগুলোকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে আমানত নিতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা হয় ১১ শতাংশ। আর ব্যাংকগুলোর জন্য ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. কায়সার হামিদ এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমানতের সুদহারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির রেট বেশি। তাই গ্রাহক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে ব্যাংকে রাখছে। কারণ অনেক ব্যাংক ৭ শতাংশের ওপরে সুদ দিয়ে আমানত টানছে। মানুষ সবসময় ব্যাংক থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেট একটু বেশি আশা করে। যেটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিতে পারছে না। তাই আমানত কমছে।

তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের একটা অনাস্থা রয়েছে। এর মধ্যে গত দুই-তিন বছর টপ চার-পাঁচটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান উন্নতি করছিলাম। তবে এখন দেখাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানেরও আমানত কমেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের গ্রাহক আমানত কমলেও অন্যান্য জায়গায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ কমলেও ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমেনি। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এনবিএফআইগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৩০৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। গত এপ্রিল-জুন শেষে এ স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার ৮০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ২২৩ কোটি ৮০ লাখ বা শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। এক বছরে ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৩৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৪২ শতাংশ।

এতে আরও দেখা যায়, মোট আমানতের মধ্যে ৯৭.৩০ শতাংশই মেয়াদি (ফিক্সড) আমানত। এ শ্রেণির আমানতের পরিমাণ কমে গেছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ফিক্সড ডিপোজিট বা মেয়াদি আমানতের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৯৮০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে তা কমে ৪০ হাজার ৪৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দাঁড়ায়। এছাড়া তিন মাসের ব্যবধানে অন্যান্য আমানত ০.১৯ শতাংশ কমেছে।

বিভাগওয়ারী বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ঢাকাতে ১.৩০, খুলনা ১০.১৫ ও ময়মনসিংহে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ আমানত কমেছে। এছাড়া বিতরণকৃত ঋণের ৩৫.১৪ শতাংশই গেছে শিল্পে, ৩১.১৩ শতাংশ বাণিজ্যে এবং ১৭.৫৯ শতাংশ ভোক্তা খাতে।

এনবিএফআইগুলো সর্বনিন্ম তিন মাস মেয়াদে টাকা জমা নিতে পারে। এখনও দেশের বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ঋণ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত যাদের যত বেশি, তারা তত ভালো অবস্থানে আছে। মেয়াদি আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার তিন মাসের মূল্যস্ফীতির কম হবে না। তারল্য-সংকট ও মূল্যস্ফীতি বাড়ায় অনেক ব্যাংক এখন মেয়াদি আমানতের সুদহার বাড়িয়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।

সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতিতে এনবিএফআইগুলোর অংশগ্রহণ দিন দিন কমে আসছে। যদিও নতুন নতুন এনবিএফআই অনুমোদন দেয়া অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ নগদ ফাইন্যান্সকে প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

২০১৬ সালে দেশের ঋণের ৭.৩০ শতাংশ ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। এরপর নতুন নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমে এলেও ২০২১ সালে এ ঋণ কমে ৫.৩০ শতাংশে নেমে আসে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৩০৪টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে শহরে ২৮০টি ও গ্রামীণ এলাকায় ২৪টি শাখা রয়েছে। এছাড়া ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৫ লাখ ৭০ হাজার ১৯৬টি হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষের ব্যক্তিগত ৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৯ ও প্রাতিষ্ঠানিক ২৬ হাজার ৭৭৮টি হিসাব রয়েছে। আর নারীদের মধ্যে ব্যক্তিগত ১ লাখ ৬৯ হাজার ২১৭ ও প্রাতিষ্ঠানিক ২ হাজার ৫১২টি হিসাব রয়েছে।

মোর্শেদ/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর